নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নদী-নালা, জলাশয় গুলোতে চায়না দুয়ারী জাল ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরার মহোৎসব চলছে।এতে মাছের ডিমসহ দেশি জাতের ছোট-বড় মাছ, বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ উঠে আসে। এসব কারণে দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক শক ও চায়না দুয়ারী জালে বেশি মাছ মিলে। তাই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু অপেশাদার জেলে বেশি মাছের আশায় বৈদ্যুতিক শক ও চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ ধরছে। এতে নদী, খাল ও জলাশয়ে থাকা মাছের পোনা, ডিমসহ অন্যান্য জলজপ্রাণীও মারা পড়ছে। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে জাল ফেলে আগের মতো মাছ পাচ্ছেন না তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তিস্তা, তিস্তা নদীর মূল ক্যানেল, বুড়িতিস্তা, নাউতারা নদী, ধুমনদী, কুমলাইসহ বিভিন্ন খাল-বিলেগুলোতে প্রকাশ্যে চায়না দুয়ারী জাল ও বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। দুয়ারী জালে মাছের ডিমসহ ক্ষুদ্র পোনা, শামুক-ঝিনুক, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ উঠে আসে। জালে উঠে আসা অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা যায়। অন্যদিকে নদী ও জলাশয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকারের প্রবনতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এ পদ্ধতিতে নৌকায় ইজিবাইকে ব্যবহৃত ব্যাটারির সঙ্গে একটি ইনভার্টার (ব্যাটারির বৈদ্যুতিক শক্তি কমবেশি করার যন্ত্র) যুক্ত করা হয়। পরে সেই ইনভার্টার থেকে দুটি তার বের করে একটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। অন্য তারটি একটি জালির সঙ্গে যুক্ত থাকে। বিদ্যুতায়িত ওই জালি যখন নদীর পানিতে ফেলা হয়। তখন জালির ৮-১০ ফুট ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা জলের সব মাছ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যায়। পরে ভেসে ওঠা মাছগুলো জালি দিয়ে নৌকায় তোলা হয়। এ পদ্ধতিতে মাছ শিকারে সাপ-ব্যাঙসহ অন্যান্য জলজপ্রাণীও মারা পড়ে।

উপজেলার বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ ধরতে আসা বিষ্ণু দাস, অন্তর, দয়াল দাশসহ কয়েকজন স্থানীয় জেলে বলেন, অবৈধ পদ্ধতিতে মাছ শিকার করায় এখন দেশীয় মাছ নদী, খালবিলে নেই বললেই চলে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত তাদের ৩ জনের দল যে মাছ ধরেছেন তার বাজারমুল্য ২০০ টাকা হবে। তারা জানান, বৈদ্যুতিক শক, কারেন্ট জাল ও চায়না ফাঁদে মাছ শিকারের কারণে মাছের পোনা ও ডিম নষ্ট হচ্ছে। এতে সাধারণ জেলেদের জীবিকা নির্বাহে সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ জাল দিয়ে মাছ ধরে অনেক জেলে দিনে ৩০০ টাকার মাছও ধরতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে নদী, খালবিলে, জলাশয়ে আর কোনো মাছই থাকবে না। এসব মাছ শিকারিকে আইনের আওতায় আনা না হলে সাধারণ জেলেদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলেন তারা।

উপজেলার রামডাঙ্গা মৎসজীবি সমিতির সভাপতি অবিলাষ চন্দ্র দাশ বলেন, কারেন্ট ও চায়না দুয়ারী জাল বিক্রি, ব্যবহার দুটিই নিষিদ্ধ। কিন্তু তা বন্ধ হচ্ছে না। এতে অনেক দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তসহ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অনেক জলজ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি অবিলম্বে অবৈধ পদ্ধতিতে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা মৎস্য অফিসার শামীমা আকতার বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু জেলে গভীর রাতে নদী-জলাশয়ে নিষিদ্ধ জাল ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার করছে। তাদের চেষ্টা করেও আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাদের শনাক্ত করতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

 

 

বার্তাবাজার/এসএইচ