ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান, প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের চাপের মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার ছিল, কিন্তু ঢাকার জ্যামের কারণে এটি তার কাছে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাফিকে আটকে থাকার পরও সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো অনেক কষ্টসাধ্য। তারই এক সহকর্মীর পরামর্শে হাসান টেলিমেডিসিনের সাহায্য নেন, এবং তিনি তার মোবাইল ফোনে সহজেই একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। হাসান দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ পেয়ে যান এবং অল্প সময়ে নিজের বাসা থেকেই তার অসুস্থতার সমাধান পান। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে হাসান বুঝতে পেরেছেন, বর্তমান সময়ে টেলিমেডিসিন বিলাসিতা নয়, বরং প্রতিদিনের প্রয়োজন।
টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি শহরের ঘরে বসে যেমন চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন, তেমনি গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত মানুষের জন্যও এটি একটি যুগান্তকারী উপায় হতে পারে। ঢাকার যানজটের মতোই দেশের গ্রামাঞ্চলে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া। অনেক গ্রামেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, আর অনেক মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে শহরে আসতে হয়। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ তার এলাকার কোন ফার্মেসি থেকে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন। এতে গ্রামীণ মানুষেরা উন্নত ও দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারছেন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে এক বা একাধিক ফার্মেসি রয়েছে, যা টেলিমেডিসিন সেবার জন্য এক বড় সুবিধা। ফার্মেসিগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে টেলিমেডিসিন সেবার সাথে যুক্ত করা গেলে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আরো সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে। ফার্মেসির কর্মীরা যদি গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বুঝে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন এবং টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসকদের সাথে যুক্ত করতে পারেন, তাহলে তারা খুব সহজেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। এতে সময় বাঁচবে, খরচ কমবে এবং মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষার সুযোগ পাবে। ফার্মেসিকে টেলিমেডিসিন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে এবং তাদেরকে সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা আরো কার্যকরী করা যেতে পারে। সরকার যদি টেলিমেডিসিন সেবাকে উৎসাহিত করতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হয়, তাহলে এই সেবাটি আরও দ্রুততার সাথে মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে সরকার বেসরকারি খাতকে টেলিমেডিসিন সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালনে সহায়তা করতে পারে।
তবে টেলিমেডিসিন সেবার মান বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে যেন সঠিক এবং মানসম্পন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত হয়, তা দেখাশোনা করতে একটি নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজন। এটি স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরিতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি টেলিমেডিসিনের সঠিক ব্যবহার এবং মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
টেলিমেডিসিন সেবা আজকের যুগে বিলাসিতা নয়, বরং একটি আবশ্যক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শহরের জ্যামের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক, গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সমস্যা সমাধানে সহায়ক এবং ফার্মেসিগুলোকে একটি টেলিমেডিসিন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক। সরকারের সহায়তা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার প্রসার ঘটানো সম্ভব।
বর্তমান সময়ে, টেলিমেডিসিন সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।