নীলফামারীর ডিমলায় জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড বিতরণে হয়রানি, অনিয়ম ও টাকা আদায়ের অভিযোগ। শনিবার (২ নভেম্বর) জনতা ডিগ্রী কলেজ মাঠে খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ভোটারদের স্মার্ট কার্ড বিতরণ করেছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচন অফিসারদের লোক বাইরে বসে দশ থেকে বিশ টাকায় ভোটারদের টোকেন দিচ্ছে। কেউ টোকেন ছাড়া স্মার্ট কার্ড সংগ্রহে আসলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। টাকা গ্রহণের ঘটনা নির্বাচন অফিসারকে অবহিত করেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার দশ ইউনিয়ন প্রায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ভোটারদের মাঝে বিতরণ করা হবে স্মার্ট কার্ড।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের জনতা ডিগ্রী কলেজে বিতরণ করা হচ্ছে জাতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্ট কার্ড। কলেজ মাঠে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ ও টেবিল দিয়ে প্রায় ১০ টি ভ্রাম্যমান বুথ বসিয়ে ভোটারদের টোকেন দেয়া হচ্ছে। ভোটারদের কাছে প্রতিটি স্মার্ট কার্ডের টোকেন বাবদ নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা। টোকেন ছাড়া মিলছে না স্মার্ট কার্ড। তাই অনেকই বাধ্য হয়ে টোকেন ক্রয় করছেন। অন্যদিকে, স্মার্টকার্ড বিতরণ কক্ষ লাগোয়া জায়গায় কলেজের বিদ্যুৎ, ব্রেঞ্চ-টেবিল ব্যবহার করে কাভার, ডুবলিকেট (স্ক্যান) কপি, লেমোনেটিং করছে একটি চক্র। এতে প্রতিজনের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা ৭০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও সার্ভারের ত্রুটি ও পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থার অভাবে স্মার্ট কার্ড তুলতে পারছেন না অনেকেই। কেউ কেউ হয়রানির শিকার হয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সিরিয়াল নাম্বার সংগ্রহ করে তুলছেন স্মার্ট কার্ড।
চুকানীটারি পাড়ার আবুল কালামের ছেলে মো. সেরে আলম (৩২) বলেন, ওদের (স্মার্ট কার্ড বিতরণ কারিদের) লোক বাইরে বসা আছে। দশ টাকায় টোকেন দিচ্ছে। আমি টোকেন ছাড়া ভিতরে গেছি উনারা আমাকে বেড় করে দিয়েছে। আমি স্মার্ট কার্ড না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসছি। বন্দর খড়িবাড়ি এলাকার মৃত মাজিদ উদিনের ছেলে মো. নমির উদ্দিন (৬৫ বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য পাঁচটি টোকেন নিয়েছি। পাঁচটি টোকেন বাবদ পঞ্চাশ টাকা চাইল চল্লিশ টাকা দেই। টোকেন বিক্রেতারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে, নির্বাচন অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেন তারা। কলেজের বেঞ্চ-টেবিল ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে লেমোনেটিং, ডুবলিকেটকপি তৈরি ও কাভার বিক্রেতা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ভদ্রা এলাকার মৃত. মইনুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা (৪২) বলেন, যেখান স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে আমরা সেখানে ব্যবসা করি। এখানে বিদ্যুৎ বিল কেন দেব (?) জায়গা ও বিদ্যুৎ সরকারের। কলেজের (জনতা ডিগ্রী কলেজ) টিচারদের সাথে কথা বলে এখানে বসেছি। প্রতিটি টেবিল বাবদ স্যারদের টাকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জনতা ডিগ্রী কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ আফতাব হোসেন বলেন, তারা বসবে এ কারণে সৌজন্যতামূলক বেঞ্চ-টেবিল দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ আসবে সেজন্য দু’চারটা বেঞ্চ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্পর্কে আমি অবগত নই। ওদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের প্রশ্নেই আসে না। উপজেলা নির্বাচন অফিসার শুভ কুমার সরকার বলেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণে টোকেন দেয়ার জন্য আমাদের ২টা মডেম ও ৩৪ জনের একটা টিম রয়েছে। কোন অপারেটর যদি টাকার বিনিময়ে টোকেন প্রদান করে থাকেন; তাহলে তার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন অফিসার আরও বলেন, আলাদা কাভার ব্যবহার করতে আমরা বারবার নিরুৎসাহিত করছি। এ ক্ষেত্রে কেউ অতি উৎসাহী হয়ে যদি স্ক্যান, ডুবলিকেট কপি বা আলাদা করে কাভার নেয় সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই। কারিগরি ত্রুটির কারণে যারা স্মার্ট কার্ড তুলতে পারছেন না তাদের জন্য অফিসে হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণে টোকনের কথা বলে টাকা আদায়ের কোন সুযোগ নেই। কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বার্তাবাজার/এসএইচ