কক্সবাজারের টেকনাফে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর মূলহুতা টেকনাফ উপজেলার বিতর্কিত সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ মাদককারবারী ও সাবেক এমপি বদির সেনাপতি। তার বিরুদ্ধে বেশ কটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দুদকের মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলায় তিনি পলাতক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (১ নভেম্বর) তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের একটি নির্ভর্যোগ্য সূত্র। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা থেকে তার ছেলে শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর টেকনাফে জাফরের নেতৃত্বে তার ছেলে দিদার মিয়া, শাহজাহান, ইলিয়াছ, রাশেদ ও সালাহউদ্দীন প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালায় ও বিএনপি নেতা কর্মীদের বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করে। এতে বহু লোক আহত হয়। এই ঘটনায় জাফরের বিরুদ্ধে বেশ কটি মামলা হলে তিনি তার ছেলেদের নিয়ে গাঁ ঢাকা দেন।
সূত্র জানিয়েছে, জাফরের একটি বৈধ অস্ত্রের আড়ালে তার তিন ছেলের একই রকম তিনটি শর্টাগান রয়েছে। ছাত্র-জনতার উপর হামলাকালে এসব অস্ত্র থেকেই গুলি ছুঁড়ে তার ছেলেরা। পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজে তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
কে এই জাফর?
মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহমেদের ছেলে জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে উঠেন শ্রমিকনেতা নামধারী দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ।
টেকনাফ স্থল বন্দরের সব বাণিজ্যিক ট্রাক’কে কেন্দ্র করে রমরমা চাঁদাবাজি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা জাফর অবৈধ টাকা ও চিহ্নিত কয়েকজন ডাকাতদের ক্ষমতার জোরে একসময় নির্বাচিত হন ইউপি সদস্য। পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে দ্বিতীয় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে যান তিনি। কালের পরিক্রমায় নানা রুপে আবির্ভূত হয়ে শুধুই বেড়েছে জাফরের অপরাধ কর্মকান্ড আর অবৈধ অর্থ। ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকাকালীন বদির সাথে গড়ে ওঠে সখ্যতা। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শুরু হয় জাফরের নতুন অধ্যায়।
বদির সেনাপতি হিসেবে উত্থান:
ক্ষমতার পালা বদলের পর ২০০৯ সালে বিএনপি ছেড়ে সাবেক এমপি বদির হাত ধরে বিএনপি থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন জাফর। বদির ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ছেলেদের দিয়ে মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তুলেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যে কালো টাকার কুমির বনে যান। ফলে নাম উঠে আসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে মাদক তালিকায় শীর্ষ দশে। বদির বদান্যতায় কালো টাকার জোরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়ে দলটির সমর্থন ও বদির ছত্রছায়ায় চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান হন। পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হলেও টাকার জোরে কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য হয়ে ক্ষমতাসীন পদ ধরে রাখেন। বদির একছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ৬ষ্ট উপজেলা নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রকাশ রয়েছে তিনটি উপজেলা নির্বাচনে তিনি অন্তত শত কোটি খরচ করেছেন। গত সংসদ নির্বাচনে উখিয়া টেকনাফ আসনে নৌকার পক্ষে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোট ডাকাতি করে বদির গভীর আস্থা অর্জন করে ‘বদির সেনাপতি’ তকমা পেয়ে যান।
এদিকে প্রথম মেয়াদে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জনের দ্বায়ে ২০১৯ জাফর ও তার স্ত্রী খাদিজার নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতির বিষয়টি জানা নাগেলেও চলতি বছর মে মাসে জাফরের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে সংস্থাটি।
বার্তাবাজার/এসএইচ