দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয় চট্টগ্রামকে,আর এখানেই রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সমুদ্র বন্দর “চট্টগ্রাম বন্দর”। এই বন্দরকে ঘিরেই সচল রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক চাকা।দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরকে ঘিরে চলছে দলাদলির খেলা।বন্দর নিয়ে দুর্নীতির উপস্থিতি ছিল বরাবরই। এবার দুর্নীতির ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে বন্দরের ক্রেন অপারেটর হুমায়ুন-নাসির গংদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে যানা যায় দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্ধরের ক্রেন অপারেটর পদে কাজ করছেন হুমায়ুন কবির।আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে হুমায়ুন সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজান খান ও চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিনের ছত্র ছায়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে করে তুলেছিল একক আধিপত্য।
দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে হুমায়ুন সভাপতি হন চট্টগ্রাম বন্দর উইন্সম্যান বহুমুখী সমাবায় সমিতির,এতে সম্পাদক হন তারই ঘনিষ্ঠ সহচর নাসির উল্লাহ।সমিতির পদ ও দলীয় দাপট ব্যবহার করে হুমায়ুন বিগত বছর গুলোতে করেন ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি।
বন্দরে বৈধ কার্ডধারীদের রেখে হুমায়ুন -নাসির গংরা বন্দরের ৩ টি বার্থে(কার্গো,আউটার,কন্টিনার) ক্রেন অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেন তাদের ঘনিষ্ঠজনদের।বিনিময়ে হাতিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা।তাদের এরুপ নিয়োগের ফলে বেকার হয়ে পরেন বন্দরের বৈধ কার্ডধারী ক্রেন অপারেটররা।দিনের পর দিন কাজ ও বেতন বিহীন সময় কাটছে বৈধ ওই সকল ক্রেন অপারেটরদের।
তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ দেওয়া হলেও মিলেনি কোনরুপ আলোর মুখ।সরকার দলীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা থাকায় ছিল তার অন্যতম কারন।
হুমায়ূন-নাসির গংদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে বার্তা বাজাররে হাতে আসে আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।যেখানে দেখা যায় হুমায়ুন বন্দরের সামান্য একজন ক্রেন অপারেটর হয়েও তার রয়েছে ৫টি বিলাসবহুল ফেলুডার গাড়ি,স্ত্রীর নামে রয়েছে চট্টগ্রামের বড়পুলে একটি সুবিশাল ফ্ল্যাট,এছাড়াও জায়গা সম্পত্তি রয়েছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও কুমিল্লা জেলায়।তার গ্রামে বাড়ি সন্দীপে রয়েছে ৫তলা ফাউন্ডেশনের বিলাশ বহুল বাড়ি।
সম্পত্তির হিসেবে পিছিয়ে নেয় তার ঘনিষ্ঠ সহচর নাসির উল্লাহও,৩টি ফেলুডার গাড়ি সহ রয়েছে বাড়িও।
যেখানে হুমায়ুন – নাসিরদের রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি সেখানে তাদের ইনকাম কত?এই প্রশ্ন থেকেই যায়।
বন্দরের এই পদে কয়েক দফা বেতন বাড়িয়ে বর্তমানে দৈনিক বেতন ধার্য্য করা হয়েছে ২৭৯৮ টাকা।সেই হিসাব মতে ধরলেও গত ১৭ বছরে অর্থাৎ চাকরির পুরো জীবনে হুমায়ুনের মোট আয় হওয়ার কথা ১ কোটি ৭১ লাখ ২৩ হাজার ৭৬০ টাকা।কিন্তু তার বর্তমান সম্পত্তিই রয়েছে কয়েক কোটি টাকার।
শুধু এখানেই শেষ নয় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও মামলা ছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় আরো একটি মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগরে ক্ষমতা ব্যবহার করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া এই হুমায়ুন-নাসির গংরা হাসিনা সরকার পতনের পরও কিভাবে এখনো টিকে রয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরে?আমাদের সূত্র বলছে,দলীয় খোলস পাল্টিয়ে এখন বিএনপি পন্থী শ্রমিক সংগঠনের সাথে লিয়াজু করে টিকে আছেন তারা।এ দলের আরো একজন মোঃ ইউসুফ। যিনি একসময় সম্পৃক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিক লীগের সাথে কিন্তু দল পাল্টিয়ে সে এখন দায়িত্ব এসেছেন বিএনপি পন্থী শ্রমিক সংগঠনের।আর এভাবেই এখনো টিকে আছেন হুমায়ুন নাসির সহ তাদের বাকী সহচররা।
এসব বিষয়ে মুঠোফোনে হুমায়ুনকে একাধিক বার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।তার সহচর নাসিরের সাথে কথা বললে সুকৌশলে এড়িয়ে যান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো। বিলাশবহুল গাড়ি প্রসঙ্গে নাসির উল্লাহ জানান,”পার্টনারশিপের গাড়ি সেগুলো”এবং দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে কোনরুপ আধিপত্য বিস্তার করেননি বলে জানান তিনি।
এদিকে দল পাল্টিয়ে বর্তমানে বিএনপি পন্থী শ্রমিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া আবু ইউসুফ অকপটে শিকারও করে নেন পূর্বের অনিয়মের কথা।তবে তিনি আশ্বাস দেন বর্তমান কোনধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হবে না, এর কারন বিএনপি পন্থী ওই শ্রমিক সংগঠনের মূল দায়িত্বে তিনি।অবৈধ নিয়োগধারীদের বিষয়ে তিনি বলেন,আমার কার্যক্রম চলমান রয়েছে,অবৈধদের বাতিল করে বৈধদের বহালের জন্যও আমি কাজ করছি”।
এসকল বিষয়ে বার্তা বাজারের অনুসন্ধানী টিমের আরো গভীর অনুসন্ধান চলছে।
বিস্তারিত আসছে বার্তা বাজার মাল্টিমিডিয়াতে….