চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মদিনার মসজিদে কুবায় ১ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে মদিনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।মদিনার কুবা মসজিদে ২০২৪ সালের শুরু থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইবাদত করেছেন। এখানে আগত মুসলিমরা অসাধারণ সব সেবা পেয়ে থাকেন। আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বাড়াতে এ মসজিদে নামাজ আদায় ও জিয়ারাহ করে থাকেন তারা। মসজিদে কুবার রয়েছে ১৪০০০ বর্গমিটার সুসজ্জিত চত্বর। যেটি জিয়ারাহকারীদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়।
এ মসজিদে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের জন্য সার্বক্ষণিক ৬টি বিশেষ বাহন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদ ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে ৮০০০ বর্গমিটার নতুন কার্পেটিং করা হয়েছে। ৯৮০০০ লিটার জমজম পানির মজুদ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৫০০টি লাইটিং ইউনিট যুক্ত করা হয়েছে, যা ভিজ্যুয়াল শৈলিকে অসাধারণ করে তুলে। এ কারণেই মসজিদে কুবা অনন্য একটি জায়গা।
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াত পাওয়ার পর এটাই প্রথম মসজিদ, নির্মাণ করেছেন। এমনকি ইসলামের ও উম্মতে মোহাম্মদির প্রথম মসজিদ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী আর মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান ও ফজিলত। এ মসজিদের আলোচনা কোরআনে করা হয়েছে। মসজিদ সংলগ্ন অধিবাসীদের একটি বিশেষ গুণের প্রশংসা করা হয়েছে।
মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ে অত্যাধিক ফজিলত রয়েছে। মসজিদে কুবায় নামাজের ফজিলতের কথা অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশ্বারোহণ করে কিংবা হেঁটে মসজিদে কুবায় আগমন করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
অন্য এক হাদিসে রয়েছে, প্রতি শনিবারে রাসুল সা. কুবায় আগমন করতেন। (বুখারি-মুসলিম)। আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি ওমরাহর সমপরিমাণ। (তিরমিজি)
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নাত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে একটি ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। (ইবনে মাজাহ) তাই তো রাসুল সা. এর যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও তাদের এই আমল অব্যাহত রয়েছে।
হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসের প্রথম দিন আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনা অভিমুখে হিজরত করেন। আর এ হিজরতের মধ্য দিয়ে মদিনা শহরকে কেন্দ্র করে ইসলাম ও কোরআনের বাণী বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। রসুলের সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর সাহাবীরাও পর্যায়ক্রমে মদিনা গমন করেন।
হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে কুবা মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মূলত তারই তত্ত্বাবধানে মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশ কয়েকরাত এই মসজিদে অবস্থান করেন এবং কসর নামাজ আদায় করেন।
কুবা মসজিদে বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে, যা দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম, সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ-এর নেতৃত্বে সম্পন্ন হচ্ছে। এটি মসজিদের প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ, যার ইতিহাস প্রথম হিজরিতে শুরু হয়েছিল।
এই সম্প্রসারণ শেষে, মসজিদটির আয়তন হবে ৫০০০০ বর্গমিটার, যাতে প্রায় ৬৬০০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এটি বর্তমান ধারণক্ষমতার দশগুণ বেশি। সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন
বার্তাবাজার/এসএম