আবারও সরগরম হতে যাচ্ছে রাজনীতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ দখলে নিজেদের নানা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনের ছ মাস বাকি থাকতে দুই পক্ষের এবারের আন্দোলন নিয়ে জনমনে কৌতূহলের শেষ নেই। এবার সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপিসহ ৩৬ রাজনৈতিক দল। আগামী সপ্তাহেই তাদের এই কর্মসূচির চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে টানা কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। এতদিন একলা পথ চললেও সামনের দিনগুলোয় ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সক্রিয় করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।

ভোটের প্রস্তুতিতে গতি বাড়াবে আ,লীগ

ঈদের পর এবার ভোটের প্রস্তুতিতে আরও গতি বাড়াবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে মাঠের কর্মসূচি আরও জোরালো করার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। পরিকল্পনা সাজাতে জেলা, উপজেলা ও মহানগরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে জুলাই মাসজুড়েও অব্যাহত থাকবে শান্তি ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এর সঙ্গে থাকবে বিক্ষোভ মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচিও। মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি থাকবে শোকের মাস আগস্টে। সেপ্টেম্বর থেকে আবারও জেলায় জেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন জনসভা শুরু হবে। এই সময়ে নানা সভা-সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্রের পাশাপাশি তুলে ধরা হবে বিএনপি-জামায়াতের নানা ‘অপকর্ম’। এছাড়া সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের মাঠে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আরও সক্রিয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি অতীতের মতো নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রাখা হবে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন তো আমরা সেই কবে থেকে দেখছি। তাদের হরতাল-অবরোধও সেই কবে থেকেই চলছে। সেগুলোই তো এখনো উঠিয়ে নেয়নি। সুতরাং এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমরা আমাদের জনগণকে সতর্ক করছি। নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতাকে আরও জোরদার করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে বলেছেন। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াতের সময় তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতিসহ যেসব অপকর্ম করেছেন সেগুলো আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তৃতীয়ত, আমাদের সময়ে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলো আমরা আরও বেশি করে জনগণের সামনে তুলে ধরব।’

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনেও জয় পেতে নানা কর্মসূচি নিয়ে আগেভাগেই মাঠে নেমেছে দলটি। অন্যদিকে এতদিন নানা কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার পতনের একদফা নিয়ে মাঠে নামছে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। এদিকে বিএনপিকে শুরু থেকেই ফাঁকা মাঠ ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের কর্মসূচির দিন নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীনরাও। সামনের দিনগুলোতেও বিএনপিকে রাজপথে ফাঁকা ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। অতীতের ধারাবাহিকতায় নানা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, বিএনপির কর্মসূচির দিনে অতীতের মতো আমরাও মাঠে থাকব। এর সঙ্গে আরও কিছু কর্মসূচি দেওয়া হবে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এসব কর্মসূচি। তৃণমূল পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের কারণে মাঠ নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা চাঙা থাকবেন। তিনি আরও জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও শোকের মাস আগস্টে মাসব্যাপী কর্মসূচি থাকবে। সেপ্টেম্বর মাসের কর্মসূচি হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক। নানা ধরনের সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি সফর আবার শুরু হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘সরকার উৎখাত, একদফা আন্দোলন-এগুলো তো বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে। কিন্তু তাদের এই কথাবার্তায় জনভিত্তি নেই। জনগণ তাদের এই ধরনের বক্তব্যকে সমর্থন করে না। তাদের ডাকেও সাড়া দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই মাঠে আছে। আওয়ামী লীগ মাঠের পার্টি, যে কোনো অপকর্ম, অরাজকতা হলে মাঠেই জবাব দেবে। বুকের রক্ত দেবে তবুও অপশক্তির কাছে হার মানবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে যাব। শেখ হাসিনার সরকার তাদের জন্য কী কী করেছে সেই বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরব। আর জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেব-২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত কী করেছে। তখনকার বাংলাদেশ কেমন ছিল, সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরব।’ তিনি আরও বলেন, আমরা জেলায় জেলায় যাব, জেলার নেতারা উপজেলায় যাবে, প্রতিটি জায়গায় নানা অনুষ্ঠান হবে। এভাবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরব।’

এদিকে বিএনপি জোটগতভাবে আন্দোলনের পথে হাঁটলেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ১৪ দলীয় শরিকদের দেখা মেলেনি। দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচিতেই তারা সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ঈদের আগে জোটের একটি বৈঠকের পরে ঢাকায় ও সাভারে সমাবেশ করেছে ১৪ দলীয় জোট। সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের মাঠে শরিকদের আরও সক্রিয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু সভা-সমাবেশ করার কথা ভাবছে তারা। এ মাস থেকেই এসব কর্মসূচি শুরু হবে। শরিকরা ওই সভায় জোট নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসার তাগাদা দিয়েছেন।

এদিকে আন্দোলন বা অন্য নানা ইস্যুতে আলোচনা না করায় ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও শরিক দলের নেতারা বলছেন, তারা বিএনপির আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রয়োজন হলে কিংবা প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানালে তারা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবেই মাঠের কর্মসূচিতে যাবেন। আওয়ামী লীগের আন্দোলনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। জোটের শরিকরা যার যার অবস্থানে আছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।

এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সঙ্গে নানা কর্মসূচি নিয়ে শুরু থেকেই মাঠে আছে তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। বিএনপির কর্মসূচির দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথ বা এককভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এসব সংগঠন। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি সামনের দিনের আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবিলায় অতীতের মতো নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রাখা হবে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও।

একদফা আন্দোলনে বিএনপিসহ ৩৬ দল

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপিসহ ৩৬ রাজনৈতিক দল। এসব দলের মধ্যে অধিকাংশ বিএনপির সমমনা দল। যুক্ত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। আগামী সপ্তাহে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। একই সঙ্গে দেওয়া হবে রাষ্ট্র সংস্কারের ‘যৌথ রূপরেখাও’। তবে এক মঞ্চ থেকে নয়। এসব ঘোষণা আসবে পৃথক মঞ্চ থেকে। চলতি মাসের শেষ দিকে অভিন্ন কর্মসূচি শুরু করবে দলগুলো। এ লক্ষ্যে এ সপ্তাহে আবারও সমমনাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বিএনপির। একই সঙ্গে ১৯৯১ সালের আদলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে দলটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শিগগিরই আমরা এক দফা আন্দোলন শুরু করব। অর্থাৎ বিএনপি দশ দফা ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দফাগুলো মিলিয়ে এক দফা করা হয়েছে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশনের অধীনে নির্বাচন। এখন এসব দাবি নিয়ে একটা জায়গায় আমরা এসেছি। সেটা মূলতই এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবি’।

তিনি আরও বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচিতে সচেতনভাবে আমরা যাচ্ছি না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হচ্ছে, আগামী দিনেও তাই হবে। তবে এবারের আন্দোলনের ধরন হবে ভিন্ন। জনগণের সম্পৃক্ততাও থাকবে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। সরকার যাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গতিও সেভাবে তরান্বিত হবে’।

বিএনপি নেতারা জানান, কিছু দাবি সংবলিত করে একদফা দাবি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যার মধ্যে প্রধান বিষয় সরকারের পদত্যাগ। আরও রয়েছে-সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার। এক দফার বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছে আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেওয়া হবে। কর্মসূচির মধ্যে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রা, লংমার্চ ও রোর্ডমার্চ, সব শেষে ঢাকামুখী ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি থাকবে। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে। তবে এবার একটি বিষয় আমরা জোরালোভাবে স্পষ্ট করতে যাচ্ছি। সেটি হলো-শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগের দাবি জানাব না। কারণ দাবি জানিয়ে কাউকে পদত্যাগ করানো যায় না। প্রতিটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে জনগণ শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য করে। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবার সেই কাজটি করবে।

এছাড়া ‘যৌথ রূপরেখা’ও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানান, বিরোধী আন্দোলনে সফলতা এলে এবং নির্বাচনে বিজয়ী হলে ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যৌথ রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু দু’একটি বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তারা আশা করেন চলতি সপ্তাহেই তা সমাধান হবে।

সূত্রমতে, বিএনপি ছাড়াও এক দফা আন্দোলনে একমত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা ৬ দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, গণফোরাম (একাংশ), পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটে থাকা-জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট (মাওলানা আবদুর রকীব), জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাগপা (লুৎফর), ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ (শাওন), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (নুরুল আমিন বেপারী), সাম্যবাদী দল (নূরুল ইসলাম), গণদল, ন্যাপ ভাসানী (আজহারুল ইসলাম) ও বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি নেতারা জানান, আপাতত এসব দল এক দফা আন্দোলনে থাকছে। পরে আরও বেশ কয়েকটি দল যুক্ত হতে পারে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল ড. অলি আহমদ বলেন, ‘আমরাও বিএনপির সঙ্গে একমত। দীর্ঘদিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত আন্দোলন এক দফারই আন্দোলন। এক দফার কর্মসূচিতে এলডিপিও রাজপথে থাকবে’।

গত রোববার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে এক সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবৈধভাবে রাতের ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণের এখন একটাই দাবি, স্বৈরাচার সরকারের পতন। ফলে এই এক দফা দাবি আদায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাব’। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে এখন চলছে নানা কর্মসূচি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে এসব কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে যুব, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করা হয়েছে। সেখানে ব্যাপকভাবে তরুণ ও যুবকদের সাড়া পেয়েছেন বলে তিন সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন।

সিলেট, খুলনা এবং ঢাকায় আরও তিনটি সমাবেশ করবে। পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী ও মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি জনতার পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রমজীবীদের নিয়ে পদযাত্রা করবে নোয়াখালীতে। এ ছাড়া দিনাজপুরে ১৯ জুলাই, রাজশাহীতে ২৮ জুলাই, যশোরে ৫ আগস্ট, হবিগঞ্জে ১২ আগস্ট, বরিশালে ১৯ আগস্ট পদযাত্রা হবে। অন্যদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য দল পৃথক কর্মসূচি পালন করছে।

এবার ‘ডু অর ডাই’ নীতিতে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তাই নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়তে চায় দলটি। সে লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। চলতি সপ্তাহে যুগপৎ আন্দোলনের খসড়া যৌথ রূপরেখা তৈরির কমিটিগুলোর বৈঠক। ওই বৈঠকেই বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের রূপরেখা নিয়ে মতপার্থক্য নিরসন করার কথা রয়েছে। বৈঠকে রূপরেখা ঘোষণার পদ্ধতি এবং দিনক্ষণও চূড়ান্ত করা হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘৩১ পয়েন্টে একটা রূপরেখা ঠিক করছি। সেখানে কিছু কিছু পয়েন্টে এখনো একটু মতপার্থক্য আছে, সেটা নিরসনের চেষ্টা করছি। তবে নিরসন যদি পুরোপুরি নাও হয়, যতটুকু আমরা ঐক্যমত হতে পারব তার ভিত্তিতে রূপরেখা দেব। এছাড়া বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের দাবিনানা ক্রমাগত একদফার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগের এক দফা আমরা স্পষ্ট করছি’।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সবার আগে দাবি হচ্ছে এক দফা-সে বিষয়ে আমরা ঐক্যমত হয়েছি। ‘যৌথ রূপরেখার’ ৩১ দফার বিষয়েও একমত হয়েছি। ভাষাগত কিছু পার্থক্য আছে, আর সব ঠিক আছে। তবে সেটাও সমাধান হবে’।

এদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দাবির পাশাপাশি নিজেদের প্রস্তাবিত রূপরেখার খসড়া তৈরির কাজও শুরু করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি খসড়া রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন।