দুই কূলই হারালেন ড. রেজা কিবরিয়া। আইএমএফ’র ভালো চাকরি ছেড়ে দেশে এসেছিলেন রাজনীতি করতে। ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের মাধ্যমে রাজনীতিতে যাত্রা হয়েছিল তার। অল্প সময়েই তিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। নিষ্ক্রিয়তা আর নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে ওই দল ছাড়তে হয় তাকে। পরে নতুন দল গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়ে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও বেশিদিন টেকেনি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে এবার দল থেকে অপসারিত হলেন তিনি। দল থেকে অপসারিত হওয়ায় এখন গণঅধিকারেও তার আর রাজনীতির ক্ষেত্র থাকলো না। লোভনীয় চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসা সাবেক অর্থমন্ত্রী তনয় রেজা কিবরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে তা পরিষ্কার নয়।

গণঅধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি ড. রেজা কিবরিয়া।

উল্টো দলীয় ফোরাম তাকে অপসারণ করায় এখন রাজনীতির মাঠে শূন্য হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
গতকাল গণঅধিকার পরিষদের জরুরি মিটিংয়ে দলের দুই তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে ড. রেজা কিবরিয়াকে অপসারণ করা হয়। ওই বৈঠকে রেজা কিবরিয়ার অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তিনি পথে থেকেই ফেরত যান। এ সময় এক ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, ওই বৈঠকে যাওয়া নিরাপদ মনে না করে তিনি বাসায় ফেরত যাচ্ছেন। শিগগিরই তার অবস্থান জানাবেন বলেও লাইভে উল্লেখ করেন।

গণঅধিকারের গণমাধ্যম সমন্বয়ক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্ববায়ক আবু হানিফ বলেন, রেজা কিবরিয়ার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আমাদের সংগঠনের ৮৪ জন সদস্য আগের মিটিংয়ে অনাস্থা জ্ঞাপন করে চিঠি দেন। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠি পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে মিটিং কল করবে। সেই অনুযায়ী আজকে (গতকাল) মিটিং কল করে। কিন্তু তিনি মিটিংয়ে উপস্থিত হন নাই।

তিনি আরও বলেন, মিটিংয়ে না থাকলেও তিনি একটা বার্তা পাঠান। এতে লেখা ছিল মিটিংয়ে যদি কোরাম পূর্ণ হয় তবে যেন মিটিং চালিয়ে নেয়া হয়। তিনি যেহেতু কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাই দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে তাকে অপসারণ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল সকাল ১১টায় গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে না যাওয়ার ঘোষণা দেন ড. রেজা কিবরিয়া। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে পূর্বঘোষিত বিশেষ জরুরি সভা শনিবার (১লা জুলাই) সকাল ১১টায় গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আমি নিজেও সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলাম। বিভিন্ন সোর্স থেকে জানতে পারলাম যে, ভিপি নুর একই সময়ে আরও ৩টি সভা ডেকেছেন। আমি আরও জানতে পারলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী ও বহিরাগত লোক এনে কার্যালয়ের আশেপাশে জড়ো করেছেন।

রেজা কিবরিয়া বলেন, কার্যালয়ের ল্যান্ড ওনার্স আমাকে রাতে অবগত করেছেন বিশৃঙ্খলা এড়াতে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন। এ ঘটনা স্পষ্টতই একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশ্য মনে হওয়ায় নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি রাস্তা থেকে ব্যাক করে চলে আসি। এমতাবস্থায় সভার কোরাম পূর্ণ হলে সভাটি গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার আহ্বান করছি। ওদিকে সভা ঘিরে সকাল থেকেই পরিষদের সদস্য সচিব নূরুল হক নুরের অনুসারীরা কার্যালয়ে ভিড় করেন। সেখানে সমাবেশ করে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ।