জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৯৮৬ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা এইচআরএসএস (হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি)। এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের ৪১৮ জন তরুণ নিহত হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৫৫ শতাংশ।
এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ১২৭ শিশু প্রাণ হারিয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ১৭ শতাংশ। হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠী কর্তৃক ৬৬০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে এইচআরএসএস। এর মধ্যে পুলিশের হামলায় ৫১৮ জন নিহত হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৫২, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে ৫২ এবং গণপিটুনিতে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের তথ্য বিশ্লেষণ করে পর্যালোচনামূলক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে এইচআরএসএস।
ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোর বরাতে প্রতিবেদনের বলা হয়, ৯৮৬ জনের মধ্যে ৬৬৮ জনের নাম জানা গেলেও ১১৮ জনের নাম জানা যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বরাতে এইচআরএসএস বলছে, নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জন হবে। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। আন্দোলনে তরুণ ও শিশুদের পাশাপাশি ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ১৩ জন মেয়ে শিশু ও নারী নিহত হয়েছেন।
নিহত ৯৮৬ জনের মধ্যে ৭৬০ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে এইচআরএসএস। সংস্থাটি বলছে, নিহতদের মধ্যে চার বছরের আহাদ ও ছয় বছরের রিয়া গোপসহ প্রায় সব বয়সী মানুষই রয়েছে। ৭৬০ জনের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ১২৭ জন। তরুণ বয়সী ৪১৮ জন। মধ্যবয়সী ১৮১ এবং বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন ৩৪ জন। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, নিহতদের মধ্যে যাদের বয়সের তথ্য পাওয়া গেছে তাদের ৭২ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে।
নিহতদের মধ্যে ৫৫৬ জনের পেশা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে এইচআরএসএস বলছে, এর মধ্যে ২৬৫ জন শিক্ষার্থী। শ্রমজীবী আছেন ১৩৩ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫১ জন। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ৪১ জন। অন্যান্য পেশাজীবী ৬৬ জন। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী (৭১ শতাংশ)। আন্দোলনে ৮৭৯ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে এইচআরএসএসের পর্যবেক্ষণ বলছে, সবচেয়ে বেশি গুলিতে মারা গেছে ৬৭৯ জন। এ ছাড়া ৯১ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে, ৮৪ জনকে পিটিয়ে এবং অন্যান্য কারণে মারা গেছেন ২৫ জন।
প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮৬ জনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৬ জন। ৪ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪০ জন নিহত হয়েছেন। সংস্থার তথ্য মতে, শুধু সাত দিনে ১৮ থেকে ২০ জুলাই ও ৪ থেকে ৭ আগস্ট ৮৫২ জন নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনার পতনের দিন নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৯৪ জন। ৬ থেকে ৮ আগস্ট দেশের যখন কোনো সরকার ছিল না তখন কমপক্ষে ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৭৭ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬১৮ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১০৪, খুলনায় ৮০, রাজশাহীতে ৬৫, ময়মনসিংহে ৪৪, রংপুরে ৩৫, সিলেটে ২৩ এবং বরিশালে মারা গেছেন ১২ জন।
বার্তাবাজার/এস এইচ