এবারের কোরবানির ঈদে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চারদিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অন্ধকার ধেয়ে আসছে। সরকারের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। শেখ হাসিনার হুংকার আর কাজে আসবে না।
শুক্রবার (৩০ জুন) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঈদের প্রাক্কালে বাড়ির উদ্দেশে যেদিন রওনা দিয়েছে, তার পরের দিন সন্ধ্যায় বা মাঝরাতে বাড়িতে পৌঁছেছে। কেউ কেউ ঈদের দিনেও বাড়ি পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, গরিব মানুষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস চেয়ে নিয়ে আসে। তবে রান্না করার জন্য যে পরিমাণ মসলা লাগবে তা কিনতে কিছু মাংস বিক্রি করছেন তারা। ক্ষমতাসীনদের বাজার সিন্ডিকেটের কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম যেভাবে হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মধ্যম ও স্বল্প আয়ের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
রিজভী বলেন, কোরবানির ঈদে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় যেসমস্ত জিনিসের প্রয়োজন হয় যেমন—গোশত, চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও মসলাসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যই ছিল মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দেশের জনগণই যেন আওয়ামী সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। তাই এদের আমলে মানুষের জীবন কাটে আতঙ্কে, ভয়ে, অবহেলায়, অনাহারে ও অর্ধাহারে।
তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকার সবসময়ই মানুষের বেঁচে থাকার নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছে। করোনা মোকাবিলায় যেমন শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং করোনার টিকাকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনকে বিপন্ন, নিজেদের লোককে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানিদের মতো আওয়ামী সরকার বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণকে কৃতদাসের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ আওয়ামী কলাম লেখকরা বিবেক বিক্রি করে কিছু সুবিধা পাওয়ার জন্য গণতন্ত্র হত্যাকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজকে অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগণ জেগে উঠতে শুরু করেছে। রুদ্রশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও জনগণ নিপীড়কদের প্রতিহত করতে শুরু করেছে। দেশের মানুষ অধিকার ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের দুঃশাসনে বিশ্ববিবেকও জাগ্রত হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ঈদের মধ্যেও আওয়ামী সন্ত্রাসের কোনো কমতি নেই। সশস্ত্র মহড়া থেকে শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেছে। সংবাদ পেয়ে সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের ওপর যুবলীগ, ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়।
এ সময় বিএনপির প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মিয়া নুরুদ্দিন অপু, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুফ বিন জলিল, আলী আকবর চুন্নু, আজিজুর রহমান মুছাব্বির ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ গ্রেপ্তার সকল নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, কেন্দ্রীয় নেতা তারিকুল আলম তেনজিং, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।