চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে দোকান কর্মচারী সায়মান প্রকাশ মাহিন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মোঃ ফিরোজ’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শরীফ উল আলম। তিনি জানান, দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ছাত্র জনতা বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল। ছাত্রজনতার উক্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ভিকটিম দোকান কর্মচারী সায়মান প্রকাশ মাহিন (১৬) অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলন চলাকালীন চট্টগ্রাম মহানগরীর যুবলীগ নেতা এবং কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মোঃ ফিরোজ এবং অন্যান্য দুস্কৃতিকারীরা শীর্ষ নেতৃত্বের হুকুমে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে।
এছাড়াও, আসামিরা হকি স্টিক, কিরিচ, দা ও লাঠি-সোটা দিয়ে ছাত্র জনতাকে পিটিয়ে এবং ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় ভিকটিম সায়মান প্রকাশ মাহিন আন্দোলন কর্মসূচির স্থান থেকে দৌঁড়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করিলে কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মোঃ ফিরোজ এবং অন্যান্য দৃষ্কতিকারীরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি নিক্ষেপ করলে ভিকটিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আহত ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতিকারীরা তাদের হাতে থাকা লাঠি-সোটা, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ভিকটিমকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এবং অন্যান্য ছাত্র-জনতা ভিকটিম সায়মান প্রকাশ মাহিন’কে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম সায়মান প্রকাশ মাহিন’কে মৃত ঘোষনা করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিম সায়মান প্রকাশ মাহিন এর বন্ধু মোহাম্মদ শরীফ বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানায় ৪৪ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২২, তারিখ- ৩০ আগস্ট ২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৬/৩০৭/৩০২/১০৯/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মোঃ ফিরোজ ফেনী জেলার ফেনী সদর মডেল থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামপুরা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল অদ্য বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ ফিরোজ (৩৬), পিতা-আব্দুল হামিদ, সাং-মুরাদপুর, থানা-চান্দগাঁও, জেলা-চট্টগ্রাম’কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর যুবলীগ কর্মী বলে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গত ১৮ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে সে এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা বেআইনি জনতাবদ্ধে মিলিত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার এলাকায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র, চাপাতি, কিরিচ এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের হুকুমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও আক্রমণ করে হতাহতের ঘটনা ঘটায় এবং সে নিজে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে গুলিবর্ষণ করে মর্মে স্বীকার করে। এছাড়াও মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়াতে সে চট্টগ্রাম জেলা এবং মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে এবং সর্বশেষ ফেনী জেলায় অবস্থান করে আসছিল বলে জানায়।
উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে গ্রেফতাকৃত আসামি চট্টগ্রাম মহানগরীর যুবলীগ নেতা এবং কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মোঃ ফিরোজ এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, নাশকতা, মাদক এবং ছিনতাই সংক্রান্তে ০৫টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
বার্তাবাজার/এস এইচ