ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কুমিল্লার লাকসামের ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতাকে হত্যাচেষ্টা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করে ফখরুল ওই তিন নেতার ওপর হামলায় অভিযুক্ত ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীদের রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবের ফখরুলের বিরুদ্ধে এই মন্তব্য করেন লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ সময় নেতারা বলেন, রাজনীতিতে দেউলিয়া হয়ে বিএনপি এখন মিথ্যাচারে মেতে উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কুমিল্লা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরফানুল হক রিফাত, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান বাবলু, লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. ইউনূছ ভূঁঞা।

অ্যাডভোকেট মো. ইউনূছ ভূঁঞা বলেন, ‘গত ২১ জুন রাতে লাকসাম পৌরশহরের দণি বাইপাস এলাকায় পৌরসভা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইফতেখার অনিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম সৌরভ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমগীর হোসেনের ওপর যুবদলকর্মী রকির নেতৃত্বে ছাত্রদলের কতিপয় সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ওই সময় তারা ছাত্রলীগ নেতা অনিক, সৌরভ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বুকে ও পাঁজরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের প্রথমে লাকসাম এবং পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত ইফতেখার অনিকের অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে অনিককে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অনিকের মতোই বাকি দুজন কুমিল্লা মেডিক্যালে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘লাকসামে আমাদের তিনজন নেতাকে নিশ্চিতভাবে খুনের জন্যই সেদিন হামলা চালানো হয়েছে।

তবে আমি বুঝতে পারছি না মির্জা ফখরুলের মতো একজন নেতা কীভাবে বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করতে পারেন। তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন- লাকসাম পৌর শহরে বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামের বাড়িতে আমাদের লোকজন হামলা করেছে। তার বাড়ির রাস্তা নাকি কেটে দিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি সাংবাদিকরা গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখুন- লাকসামের তথাকথিত ওই বাড়িতে বিএনপি নেতা কালাম একদিনও বসবাস করেছেন কি-না? আর যেই রাস্তার কথা বলা হয়েছে সেই রাস্তা দিয়ে আমি একটু আগেও গাড়ি নিয়ে এসেছি।’

মির্জা ফখরুল আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট হামলা চালানোসহ অসংখ্য মিথ্যাচার করেছেন উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, ‘তার এমন মিথ্যাচারে লাকসামের মানুষ অবাক হয়েছে।

এভাবে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা দেখে আমরা বুঝতে পারছি- মির্জা ফখরুলরা মনে করছেন আমাদের ছাত্রলীগ নেতা অনিক আর বেঁচে ফিরবেন না। সেই হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে এখন তাঁরা মিথ্যাচারের উৎসবে মেতে উঠেছেন। বিএনপি এখন মিথ্যাচারের দলে পরিণত হয়েছে। আমরা এ ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আর দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’

কুমিল্লা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘বিএনপি রাজনীতিতে দেউলিয়া হয়ে এখন মিথ্যাচারে নেমেছে। আমি অবাক হয়েছি তারাই হামলা করে উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। বিএনপি নাম এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারা নিজেরাই তাদের বাড়িতে হামলা করে আওয়ামী লীগের দিকে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। আবার তারা উল্টো মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনও করছেন। বিষয়টি লজ্জাজনক।’

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান বাবলু বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মিথ্যাচার আমরা বুঝতে পেরেছি- বিএনপি এখন রাজনীতিতে কতটা দেউলিয়া। আর ফখরুল যার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেই আবুল কালাম কোনো রাজনৈতিক লোক না। তিনি টাকা দিয়ে রাজনীতি করতে চান। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। মিথ্যাচারের মাধ্যমে ফখরুল দোষীদের রক্ষার চেষ্টা করছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে লাকসাম উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী, লাকসাম পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. তাবারক উল্লাহ কায়েস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম হিরা, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক ও পৌরসভা মেয়র অধ্যাপক মো. আবুল খায়ের, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও এলজিআরডি মন্ত্রীর উন্নয়ন সমন্বয়কারী মো.কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা বাজার/জে আই