চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের রেল স্টেশন এলাকায় দোকান দখলের ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতার ও তার অনুসারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় আপ্যায়ন নামক একটি নির্মাণাধীন রেস্টুরেন্ট দখল করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ আলম জানান, ক্যাম্পাসে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বোমাবাজি করছে শুনে সকালেই আমরা জিরো পয়েন্টে আসি। পরে শিক্ষার্থীরা প্রক্টরসহ রেলগেট এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় যুবলীগের ক্যাডাররা আমাদের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। পরে আমরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

শিক্ষার্থীরা রেলগেটে অবস্থান শেষে ফিরে আসার সময় স্থানীয়রা পেছন থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে খবর দিলে তারা যুবলীগের নেতাকর্মীদের কারণে আসতে পারছেনা বলে জানায়। পরে মাত্র তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফ ও তার ভাই ইকবাল হোসেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই দোকানগুলো রেলওয়ের জায়গায়। এ জায়গায় যাঁরা দোকান করতেন, তাঁরা হানিফকে নিয়মিত চাঁদা দিতেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোহাম্মদ হানিফ এলাকা ছাড়েন। তবে দোকানের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি। সরকার পতনের পর তাঁর নিয়ন্ত্রিত একটি জায়গায় নতুন করে খাবারের দোকান দেন চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শেখ মাহদি হাসান। দুই মাস ধরে দোকানের মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছিলেন তিনি। আগামী দুই দিনের মধ্যেই ‘আপ্যায়ন’ নামের এই খাবার হোটেল চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে হানিফের অনুসারীরা এতে বাধা দেন। দোকান পরিচালনা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলেও দাবি করেন। এ নিয়ে গত শুক্রবারও দোকানটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে বিবাদের মধ্যে আজ ভোররাতে এই দোকানটিতে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকটি পটকা ও কয়েকটি গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গুলি ছোড়ার এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। পরে সেখানে সকাল সাতটার দিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন মাইকিং করে জানান যে স্থানীয় লোকজনের ওপর জামায়াত–শিবিরের লোকজন হামলা করেছে। তিনি সবাইকে প্রতিহত করার অনুরোধ জানান। পরে স্থানীয় লোকজনও লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। চার জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর নয়টার দিকে পুনরায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঘটনার বিষয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় একজনের দোকানে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর চালালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ভোররাত ৪টায় সেখানে প্রচুর ককটেল ফোটানো হয়। এর প্রেক্ষিতে সকালে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা গুজব রটিয়ে দেয় যে, এলাকাবাসীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর সকালে আমরা শিক্ষার্থীসহ রেলগেট এলাকায় যাই। সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা হয়েছে। এব্যাপারে দুপুরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, ছাত্র প্রতিনিধি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হবে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যুবলীগ নেতা হানিফের নামে চাঁদাবাজি, দোকান দখল, ব্যবসায় আধিপত্য সহ একাধিক অভিযোগ ও মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে ধরছেনা। পুলিশ তাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা বললেও স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি সে নিয়মিত এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে।

 

বার্তাবাজার/এসএম