আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠজন মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের নামে ৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর কাজ বাতিল করেছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। রবিবার (২০ অক্টোবর) অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। আওয়ামী লীগের সাবেক যুব প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মাসুদ আলমের সরাসরি ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানাজানি হলে ক্রয় কমিটি মাসুদের ফাইল ফিরিয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিন জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর কাজ পাচ্ছে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, সুযোগ পাবেন ২৮,৫০০ জন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে তথ্যপ্রযুক্তি  ব্যবসায়ী ও প্রকৌশলীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ এবং বৈষম্যবিরোধী আইটি উদ্যোক্তা কাউন্সিল এর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান রেখে অখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের কাজ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত আইটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের মালিক মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ অভি। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর মাছরাঙা টেলিভিশনে রাঙা সকাল নামের একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে মাসুদ জানান, তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।

শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৯৯১ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন মাসুদ। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। সাক্ষাৎকারে মাসুদ বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার বাবা আজাহার উদ্দিন আওয়ামী লীগ করতেন বলে তখন তিনি পালিয়ে যান। তখন আমি সংসারের হাল ধরি। ফলে প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনাও শেষ করতে পারিনি।

মাছরাঙা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে নিজের সম্পর্কে যা বলেছেন মাসুদ আলমঃ 

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনেও আলোচনায় এসেছিলেন মাসুদ আলম। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার দুই দিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-১৫৮১) বস্তাভর্তি টাকাসহ আটক হন মাসুদ আলম। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টায় উত্তরায় আব্দুল্লাহপুরের হাউসবিল্ডিং এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ সিগন্যালে আটক করা হয় গাড়িটি।

এসময় গাড়ির ভেতরে এক বস্তা (আড়াই কোটি) টাকাসহ মাসুদ আলম নামের ওই ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি নিজেকে প্রমিজ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পরিচয় দেন। এই বিষয়টি সেদিন দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।

ইউটিউবে মাছরাঙা টিভির প্রচারিত সাক্ষাৎকারের সঙ্গে ডেসক্রিপশনে দেয়া তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই মাসুদই সেই মাসুদ। ডেসক্রিপশনে লেখা আছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে কাজের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখায় মাসুদ আলম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩’ এ ভূষিত হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে ‘সাধারণ-বেসরকারি’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন।

মাসুদ ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পাশাপাশি ‘প্রমিজ আইটি সলিউশন’, ‘ফটোফিক্সা’, ও ‘ক্লিক দ্যা ফটো’সহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

মাসুদ আলম গত বছর যুব সমাজের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ যুব কাউন্সিলের’ সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন। যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদানের জন্য ২০২২ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ গ্রহণ করেন বলেও মাছরাঙার ডেসক্রিপশনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ আলম সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করেছে মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান। নিজ প্রতিষ্ঠান ছাড়া যুব মন্ত্রণালয়ের কাজ পেতে কমিশন বাণিজ্য করতেন তিনি।

রাসেলের আশীর্বাদে নিজের এলাকার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন মাসুদ আলম। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকেরও আশীর্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং নিজের নির্বাচনী পোস্টারে নাহিম রাজ্জাকের ছবি ব্যবহার করার বিষয়টিও মানুষের নজরে এসেছে। বিগত সরকারের আমলেও বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার কাজ করেছেন।

৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে যাওয়া মাসুদ আলমের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটের একটি স্ক্রিনশট ভোরের কাগজের হাতে এসেছে। গত ৭ অক্টোবর সেই চ্যাটে তিনি লিখেছেন, ‘ভাই, আমার প্রোজেক্টগুলো সব বন্ধ হয়ে গেল। এখন তো অন্য কিছু করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো কিছুই গোছাতে পারছি না? নইলে তো আর ঢাকায় টিকতে পারবো না, এদিকে দুদক, সাংবাদিক, টিভি লেগেছে পেছনে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলমান।

মাসুদ আলমের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

মাসুদ আলমের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর অধিকাংশই তিনি প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রমিজ আইটি সল্যুশন লিমিটেড, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগদ এক্সপ্রেস কুরিয়ার, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগদহাট বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ই-টেলিকম, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রমিজ ইনফোটেক লিমিটেড, চেয়ারম্যান সোসাইটি ফর পিপুলস অ্যাডভান্সম্যান্ট, পরিচালক রিসদা বাংলাদেশ, স্বত্তাধিকারী মোড়াল লার্নিং ইনস্টিটিউট, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আজকের দৈনিক পত্রিকা, প্রতিষ্ঠাতা ক্লিক দ্যা ফটো ও ফটো ফিক্সা।

মাসুদ আলমের রাজনৈতিক পরিচয়

জনতার আওয়াজ ডটকম নামের একটি অনলাইনে ‘গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মাসুদ আলম আলোচনায় শীর্ষে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ নিজের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে লিখেছেন মাসুদ আলম। বাংলাদেশের খবর নামের একটি অনলাইনেও তিনি একই নিউজের একাংশ প্রকাশ করেছেন। সেখানে মাসুদ আলম নিজের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত একজন সৈনিক। তিনি কখনো পদ পদবীর পিছনে ছুটেননি। পিছন থেকে আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করছেন। জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ নামক সোশ্যাল মিডিয়াতে পেজ (এমএসপিএম) সামরিক সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিচালনা করে থাকেন। এ সকল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বেসরকারিভাবে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড’ ২০২৩ পদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন। সারা বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজারের ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় জাতীয় পর্যায়ে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ ২০২২ পদক লাভ করেছেন। যা প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে গ্রহণ করেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অসাধারণ অবদানের জন্য ‘জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২৩’ লাভ করেছেন। যুব সমাজে উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান রাখায় ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগে ‘শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী’ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পদক প্রাপ্ত হয়েছেন। তার বাবা আজাহার উদ্দিন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তার ছোট ভাই রাসেল আলম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। মাসুদ আলম আসন্ন গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের আশীর্বাদ নিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে ভোটের মাঠে লড়াই করতে চান।’

প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রয় কমিটিতে প্রশিক্ষণ নিয়োগের প্রতিষ্ঠানবিষয়ক প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী স্বাক্ষরিত সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রস্তাবটি দেখেছেন, অনুমোদন করেছেন এবং ক্রয় কমিটিতে উত্থাপনের সম্মতি দিয়েছেন।’

২০২৩ সালে জাতীয় যুব কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হন মাসুদ আলম

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আগেই একটি প্রকল্প নেয়, যা বহাল রাখছে অন্তর্বর্তী সরকারও। প্রকল্পটির নাম—‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়েছিল। তিন বছর আগে ১৬ জেলার জন্য একই ধরনের আরেকটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করে। এটাও ছিল ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি। পরীক্ষামূলক প্রকল্পের খরচ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে এর আওতায় যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের ৬৪ শতাংশ বা ৮১৩ জন অর্থ উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ২১ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের চাকরি করছেন।

প্রশিক্ষণ দিতে প্রতি জেলায় ২৫টি কম্পিউটার ও হাইস্পিড ইন্টারনেট-সংবলিত দুটি ল্যাব স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ল্যাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী। একেক ব্যাচে ৫০ জন ভর্তি হতে পারবেন। তবে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস এবং তাদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। চূড়ান্ত করতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। তিন মাসের প্রশিক্ষণকালে দৈনিক ভাতা মূলত ২০০ টাকা। তবে খাবারের জন্য প্রত্যেককে আরো ৩০০ টাকা দেয়া হবে।

ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, দরপত্রে ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে গ্রহণযোগ্য (রেসপনসিভ) হয় ই–লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড, বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন যোগ করে প্রথম হয় ই–লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড।

এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী শনিবার (১৯ অক্টোবর) বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবটি এদিন ক্রয় কমিটিতে ওঠার কথা। এটি দেশের জন্য একটি ভালো প্রকল্প। আমরা দেখেছি, আগে যে পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, ফল ভালো এসেছে। এ কারণেই নতুন প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল।’

উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন মাসুদ আলম

আপনি আওয়ামী পরিবারের, আপনি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর ক্যাশিয়ার ছিলেন বলে মানুষ বলেন এবং নিজে সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বলেই কি সরকার এই প্রকল্প থেকে আপনার কোম্পানি বাদ দিলো? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, ‘মানুষ তো কত কথাই বলবে। সব কথা সত্য না। আমি বর্তমানে যুব মন্ত্রণালয়ের একটি কাজ ১৬ জেলায় সাফল্যের সঙ্গে করছি। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ই-লার্নিংসহ আরো কিছু কাজ সঠিকভাবে করেছি। আমার বয়স ৩২ বছর। এই সময়ে সরকার হিসেবে শুধু আওয়ামী লীগকেই পেয়েছি। এর বাইরে আর তো কিছু ছিল না।’

দুদকে মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুদুকে তদন্তর বিষয়টি মিথ্যা। গত মার্চে জাহিদ নামে একজন আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছে বলে জেনেছিলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম সেটা ভুয়া। এরপর একই ধরনের একটি অভিযোগ গত আগস্টে করেছে সামছুল নামের একজন। কিন্তু এটাও মিথ্যা। দুদকে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যায়নি।’

মাসুদ আলম কতটুকু পড়াশোনা করেছেন? এমন প্রশ্ন করাতে আমতা আমতা করে তিনি বললেন, ‘এক সময় আমার সার্টিফিকেট দেখাবো। তবে আমি ইন্টারমিডিয়েট পাস করে এখন পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি করছি। মাছরাঙা টিভিতে গত বছর নভেম্বরে (১১ মাস আগে) সাক্ষাৎকারে চতুর্থ শ্রেণি পাস করার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে বলেন, সেটা তখনকর কথা। এখন আমি ডিগ্রিতে পড়ছি।’

গত ৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে বস্তাভর্তি টাকাসহ মাসুদ আলমকে আটক করা হয়। ওইদিন (৭ আগস্ট) সব গণমাধ্যমের অনলাইন বিভাগে মাসুদের উদ্ধৃতি দিয়ে আড়াই কোটি টাকা উদ্ধারের সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ৭ নয়, ৮ আগস্টে ঘটেছিল। সেখানে মাত্র দেড় কোটি টাকা ছিল। সেটা আমার বেতনের টাকা। আমার অফিস স্টাফের বেতন দিতে হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। ১৬ জেলায় ৬ লাখ করে বেতন দিতে হয়। এছাড়া আমার অফিস ভাড়া দিতে হয় ৩২ লাখ টাকা। সেদিন ছাত্ররা আমাকে গাড়িতে টাকাসহ আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছিল। সেনাবাহিনীর কাছে আমার টাকার এই হিসাব বুঝিয়ে দেয়াতে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল।’