গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে যেন প্রান ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ অনন্য রাজনৈতিক দলগুলো। হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা ও হামলা সহ্য করেই দিন কাটতো।ফলে দিনের পর দিন নিজ নিজ এলাকায় বা ঘরে থাকতে পারতো না এমন নেতাকর্মীদের সংখ্যা অহরহ।
৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর সাংগঠনিক ভাবে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি।নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখা যায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে।এদিকে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড রয়েছেন শক্ত অবস্থানে।দেশব্যাপী সুশৃঙ্খলতা বজায় রেখে,সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধেও দেখা যায় বিএনপির কড়া অবস্থান।দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চলছে বহিষ্কার।তার ঠিক ব্যতিক্রম নয় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতেও।হাসিনা সরকার পতনের পর এপর্যন্ত প্রায় ডজনখানেক নেতা বহিষ্কার হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন থেকে।
২ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানকে।
এরপর দুই নেতাকে বহিষ্কার করে বিলুপ্ত করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি।২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দফতর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের এক নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
১৩ই অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম নগরে আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুনের ঘটনায় বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন নগরের পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সবুজ, তার ভাই নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং কৃষক দল নগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম।সেদিন তিনটি অঙ্গসংগঠন আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের বহিষ্কার করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য মামুন আলী ওরফে কিং আলী এবং পাঁচলাইশ থানা বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন ঝন্টুকে।তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গত ১৭ অক্টোবর পাহাড়তলীর মোহাম্মদ ট্রেডিং নামে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ চাঁদাবাজি। এই ঘটনায় মামলাও হয় তাদের বিরুদ্ধে।
নগর বিএবপির দাপ্তিরক সূ্ত্রে জানা যায়,এছাড়াও গত দুই মাসে বহিষ্কার হয়েছেন নগরের আরো একাধিক নেতা।
তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস মিয়া জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট প্রমান সাপেক্ষে বহিষ্কার করা হয় এসকল নেতাকর্মীদের,কারন দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করে দলে কারো জায়গা হবে না আর এটি হাইকমান্ডের করা নির্দেশ।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদুল্লাহ এ বিষয়ে বার্তা বাজারকে জানান, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশ,কোন উশৃংখল এবং চাঁদাবাজদের ঠাই দলে হবে না।তার নির্দেশনা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ ভাবে,দলীয় শৃঙ্খলা, দলের সুনাম বজায় রেখে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।যারা সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজী কিংবা শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পেলে এরুপ ব্যবস্থা গৃহীত হবে।
এরশাদুল্লাহ আরো জানান,নগরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাদের প্রতি আমার বার্তা থাকবে আপনরা সকলে সুশৃঙ্খল থেকে,সকল বেআইনী কাজের বাহিরে এসে দেশ গঠনে কাজ করুন।
এদিকে সাবেক নেতাদের কন্ঠেও একই সুর।দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে জানান নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর।
তবে প্রশ্ন হচ্ছেন দীর্ঘ ১৬ বছর যারা দলের জন্য কাজ করে গেছেন তারা এখন বহিষ্কার।এই ব্যাপারে দল তাদের দিকে পুনরায় ফিরে তাকাবে বিনা?এমন প্রশ্নে নেতারা জানান,এই মুহুর্তে কোন সুযোগ নেই।তবে হাইকমান্ডের নির্দেশ পেলেই দলে ফিরতে পারবেন বহিস্কৃতরা
এ বিষয়ে বহিষ্কৃত একাদিক নেতার ফোনে কলদিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি।
বার্তাবাজার/এসএম