বৃদ্ধ বাবার স্বপ্ন জীবনে একবার হলেও হেলিকপ্টারে চড়বেন। সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন তার মরিশাস প্রবাসী ছেলে আকাশ মিয়া। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রাম এম এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বাবাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।
এ সময় এ দৃশ্য দেখতে মাঠে ভিড় করেন আশপাশের শত শত মানুষ। বৃদ্ধ বাবা জাকির মিয়ারকে (৬৪) সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে ওঠার আগে প্রবাসী আকাশ মিয়াকে গ্রামের মানুষ ও তাদের আত্মীয় স্বজনেরা বিদায় দেন। এসময় তাদের সঙ্গে সফরসঙ্গী ছিলেন, প্রবাসী আকাশ মিয়ার ছেলে জাহিদ মিয়া ও আশিকুর রহমান।
আকাশ মিয়া (৩৯) আলফাডাঙ্গা উপজেলার জাটিগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মরিশাসে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। এক সপ্তাহ আগে মরিশাস থেকে দেশে ফেরেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাবা জাকির মিয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হেলিকপ্টারযোগে তাকে নিয়ে নিজ গ্রাম থেকে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। তারপর ওইদিন রাতে আবার মরিশাসে ফিরে যান তিনি।
প্রবাসী আকাশ মিয়া বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি বিদেশে যাওয়ার সময় সে হেলিকপ্টারে গ্রাম থেকে আমার সঙ্গে ঢাকা যাবে। বাবাকে ভালোবাসি তাই সেটা পূরণের চেষ্টা করেছি। কাজটি করতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
স্থানীয়রা জানান, আকাশ মিয়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় মরিশাসের আসমোক কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে এলাকার বিভিন্ন গুণীজনের মাধ্যমে প্রবাসে থেকেও পাঁচ শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের খাদ্য সহায়তা নামক কার্ড তৈরি করে প্রতি মাসে পাঁচ কেজি করে চাল দিয়েছেন। ঈদের সময় সেমাই-চিনি থেকে শুরু করে গরুর মাংস পর্যন্ত বিতরণ করেছেন তিনি। নতুন পোশাকও উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনুদান ছাড়াও খেলার সরঞ্জাম, চিকিৎসা ও ঘর তৈরি করে দেন। শুধু তাই নয়; খাদ্য সহায়তা নিতে আসা হতদরিদ্রদের যাতায়াতে ভাড়াও দিয়ে দেন। এখন তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করে তিনি আবারও সবার প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।
আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আকাশ মিয়া তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করে বাধ্য সন্তান হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন। বর্তমানে চারদিকে যেমন সন্তানদের অবাধ্যতা দেখা যায় সেই সময়ে এসে আকাশের তার বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অবশ্যই অনুকরণীয়। আকাশ প্রবাসে থাকলেও প্রতিনিয়ত গ্রামের মানুষের সঙ্গে খোঁজখবর রাখে এবং নিজের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।