বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে প্রণয়ন হয়নি। প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা হয়নি।
রোববার (২৫ জুন) সংসদের বাজেট অধিবেশনের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
জি এম কাদের বলেন, এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বার্থের চেয়ে আইএমএফ’র শর্তকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ’র কাছ থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ নিচ্ছে, তা খুব বেশি নয়। কিন্তু তাদের শর্ত অনেক। বিভিন্ন খাতে তারা ভর্তুকি কমাতে বলেছে। এগুলো বেশির ভাগ গরিব মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। আসলে রিজার্ভসহ পুরো অর্থনীতিক পরিস্থিতিই নাজুক৷ দেশে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নেই। দেশীয় অর্থনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মূল্যস্ফীতি। বাজেটে এটি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, টাকা ছাপিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। টাকা ছাপানোর মাত্রা বাড়লে দেশে জিনিসপত্রের দামও বাড়বে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বেড়েছে। সব জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সার্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বাজেটে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন কোনো চিন্তা নেই। অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত কর্মসংস্থানে লেগেছে। তার সমাধানের বিষয়টি উপেক্ষিত। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ শঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও কোন কৌশলে বিনিয়োগ বাড়বে বাজেটে নির্দেশনা নেই। সরকার যে সব কথা বলছে, সেগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত। সরকারি চাকরিজীবীদের পেছনে ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের সুদ দিতে কৃষি, স্বাস্থ্য শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমেছে। সরকার কম দামে খাদ্য দেবে বললেও এখন ৫০ টাকায় হাফ কেজি চালও হয় না; এই হলো অবস্থা। বাজেটে ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের বিষয়ে বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের লুটপাট বন্ধ না করে ভর্তুকি কমানো হয়েছে। এ সবের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কিন্তু বাজেটে বিদ্যুতে লুটপাট বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জি এম কাদের আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে রাখবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এটা হাস্যকর। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি ধরা হয়েছে। এটাও বাস্তবসম্মত নয়। গার্মেন্ট, প্রবাস আয় ও কৃষি এই তিনটি খাত দেশের অর্থনীতিকে ধরে রেখেছে। কিন্তু এসব ক্ষত্রে উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট কিছু এবারের বাজেটে নেই। আয় না থাকলেও টিন নম্বর থাকলে দুই হাজার টাকা রিটার্ন দিতে হবে এ বিধান গ্রহণযোগ্য নয়। বাজেটে একদিকে কর চাপানো, অন্যদিকে ধনীদের সারচার্জের সীমা বাড়ানো হয়েছে। সঠিক হিসাব করলে খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ বিষয়ে কোনো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বার্তাবাজার/এম আই