যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে কেন পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বেইজিং-ওয়াশিংটন বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেও যখন ভালো অবস্থানে রয়েছে চীন, তখন মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে এভাবেই ব্যাখ্যা করছেন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ড. রুবানা হক। অবশ্য পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের ব্যক্তি-ইমেজ কাজে লাগিয়ে মার্কিন বাজার ধরার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটিতে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি। এমন তথ্যই মিলেছে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে।

গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাক আমদানি করেছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি ২১ লাখ ডলার মূল্যের। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.১১ শতাংশ কম। এ সময়ে দেশটিতে পোশাক রফতানিকারক শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.১৩ শতাংশ কমেছে বাংলাদেশের। অথচ চলমান বেইজিং-ওয়াশিংটন বাণিজ্যযুদ্ধের পরও চীনের কমেছে মাত্র ২.৭০ শতাংশ। আর বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী ভিয়েতনামের কমেছে আরও কম — মাত্র ১.০৩ শতাংশ।

২০২৩ সালেও মার্কিন পোশাকের বাজার হারানোর তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর করোনার ধাক্কায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক আমদানি কমিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে মার্কিন বাজারে ভিয়েতনামের পোশাক রফতানি ২২.৩০ শতাংশ, আর চীনের ২৪.৮৭ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশের কমেছে ২৫.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি বছরের মতো গত বছরেও মার্কিন পোশাকের বাজার হারানোর তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।

আর করোনার ধাক্কায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক আমদানি কমিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর চীনের ৩৯.১৬ শতাংশ, বাংলাদেশের ১১.৭০ শতাংশ, আর ভিয়েতনামের পোশাক রফতানি কমেছিল ৭.১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের জন্য কেন সংকুচিত হচ্ছে মার্কিন বাজার? বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতির দুর্বলতা, আর শ্রম আইনসহ নানা ইস্যুতে নতুন নতুন মার্কিন শর্তারোপ পিছিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। এ কারণে বাংলাদেশ সুবিধাজনক পর্যায়ে যেতে পারছে না।

এ অবস্থায় মার্কিন বাজারে রফতানি বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্ব। এতে বাংলাদেশের ওপর নতুন করে ভরসা পাচ্ছে তারা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।

তবে নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) বলছে, রফতানি বাজার ঠিক রাখতে অবশ্যই কাটাতে হবে জ্বালানিসংকট। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে এ সংকট। এতে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কাজেই দ্রুত এ সংকট কাটাতে হবে।

আর কূটনৈতিক দক্ষতা বাড়াতে না পারলে ইউরোপের বাজারেও শক্ত অবস্থান হারাতে পারে মেইড ইন বাংলাদেশ — এমন আশঙ্কা পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের।

 

বার্তাবাজার/এসএম২