পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তার কোনোটাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা করে অন্তত ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় দিয়ে যদি এটা করা হয়, তাহলে বিষয়টা ভালো হবে এবং ব্যবসায়ীরাও সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত “সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক” বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সমুদ্র দূষণের জন্য আমরা দায়ী না। ভারত, নেপাল, চীন থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসে। এটা আমাদের নদ, নদী ও সমুদ্রে বর্জ্য সৃষ্টি করেছে। সুতরাং সব বর্জ্যের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা যুক্তিসংগত নয়।
গত ২০ জুন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৭টি একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ফেইজ আউট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম ধাপে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ১ নভেম্বর থেকে সারাদেশে অভিযান শুরু করবে সরকার। এর প্রতিবাদেই এই সংবাদ সম্মেলন করেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, বারবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, বাড়ির মালিকদের ভাড়া বাড়ানো, আগের সরকারের সময়ের চাঁদাবাজি, সরকারের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই ভালো অবস্থায় নেই। এর মধ্যে যদি ব্যবসার ওপর নতুন আঘাত আসে, তাহলে সরকারের ট্যাক্স কমে যাবে, ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়বে, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, তিনি পরিস্থিতি অনুধাবন করবেন। বর্তমান পরিস্থিতি অনেক নাজুক, প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা পথে নামবেন।
প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং প্লাস্টিক ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক সামিম আহমেদ বলেন, ২০২২ সালে যে লক্ষ্যে প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা গত ২২ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান ও সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি। পরিবেশ বাঁচাতে হলে রিসাইকেল, রিইউজের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে।
প্লাস্টিকের উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী আইডাইজড লবণ প্লাস্টিক ছাড়া মোড়কীকরণ সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ভোজ্যতেলের সঙ্গে ভিটামিন-এ যুক্ত করতে চায়, যা প্লাস্টিক কন্টেইনার ছাড়া এটা সম্ভব নয়। তরল দুধ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়। এছাড়া গাছের চারা, টেক্সটাইল ও জুট প্যাকেজিংসহ নানা কাজে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দরকার।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিন্তা করেন। সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি-না। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে, যার সঙ্গে জড়িত আছে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান। এই খাতের সঙ্গে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতা জড়িত। সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়।
আবু মোতালেব বলেন, “২০০২ সালে পাটকে উৎসাহিত করতে শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হলো। কিন্তু দেখা গেল, আদমজী জুট মিলস বন্ধ হয়ে গেছে। এখনকার উপদেষ্টার প্লাস্টিক খাতে ওপর আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলি, বিকল্প চলে এলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হয়ে যাবে।
বার্তাবাজার/এসএম