একই পরিবারের তিন সন্তান প্রতিবন্ধী। জন্মের পরপরই মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন এক ছেলে ও এক মেয়ে। আরেক ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিন প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার জলিল-সাজেদা দম্পতি। এদিকে গাছের ডাল থেকে পড়ে ৩ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জলিল মিয়া। ফলে অভাব-অনটনে দিন কাটছে পরিবারটির।

উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পশুর বুনিয়া গ্রামের জলিল মিয়া পেশায় একজন দিনমজুর। ছয় সন্তানের মধ্যে রাবেয়া আক্তার (১৩) মানসিক প্রতিবন্ধী, ছেলে মো. জসিম (১১) শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং সবার ছোট ছেলে মো. ছাব্বির (৯) মানসিক প্রতিবন্ধী। বাকি সন্তানদের মধ্যে সবার বড় ঝড়না আক্তারে বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ছোট মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জলিল মিয়ার কাজ থাকলে পরিবারের সদস্যদের দুবেলা খাবার জোটে, আর কাজ না থাকলে থাকতে হয় অনাহারে। এভাবেই কষ্টে সন্তানদের নিয়ে কোন রকমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে পরিবারটি। বাবার সূত্রে পাওয়া মাত্র ৩ শতাংশ জমিতে বসতবাড়ি। বৃষ্টির পানিতে ঘর ভিজে যায়, থাকতে হয় পলিথিন মুড়িয়ে। বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে দিনে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন জলিল মিয়া। তার সেই অল্প আয়েই চলে পরিবারটি।

প্রতিবেশী সুরাইয়া বলেন, কিছুদিন আগে গাছ থেকে পড়ে জলিল মিয়া হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অনেকদিন। তার তিনটি ছেলে মেয়ে প্রতিবন্ধী, তাদের ভালো খাবার দিতে পারে না। ঘর-বাড়ি ভাঙ্গা। আপনারা যদি পারেন তাকে সহযোগিতা করেন।

জলিল মিয়ার স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, আমরা অনেক কষ্টে আছি। অনেকদিন ধরে হাসপাতালে ছিলাম কোনো কামাই করতে পারে না। আমার তিনটি ছেলেমেয়ে প্রতিবন্ধী। তাদের যদি ভালো ডাক্তার দেখাতে পারতাম তাহলে তারা সুস্থ হয়ে যেত। ওদের ভালো খাবার দাবার খাওয়াইতে পারি না।

জলিল মিয়া বলেন, আমার কোনো সম্পত্তি নেই। ঘর আছে, সেটাও ভাঙ্গা। হাসপাতালে ছিলাম অনেকদিন, ডাক্তার বলেছে ছয় মাসে কোনো কাজ করা যাবে না। তারপরও গ্রামের দিনমজুরের কাজ যখন যেটা পাই সেটা করে থাকি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের ভালো খাবার দিতে পারি না। ওরা খুব কষ্টে আছে।

কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালমা জাহান বলেন, আমার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের জলিল মিয়া একজন দিনমজুর। তার তিনটি সন্তান প্রতিবন্ধী। ইতোমধ্যে দুটি সন্তান প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। আরও একটি সন্তানের জন্য কার্যক্রম চলছে। এছাড়া যেকোনো সাহায্য সহযোগিতার জন্য আমাদের কাছে এলে তাদের আমরা সব সময় সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।