ধর্মীয় সম্প্রীতির মূল্যবোধ বিবেচনায় দুর্গাপূজা সর্বজনীন উৎসব। এরই মধ্যে আড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দশমীতে দেবীকে বিদায়ের আগপর্যন্ত চলবে এই পূজা-অর্চনা। এসব উৎসবে এখন যোগ দিচ্ছেন অন্য ধর্মাবলম্বীরাও। অনেকে নিমন্ত্রণ পাচ্ছেন বাসাবাড়িতেও।

পূজার প্রসাদ বা অতিথি আপ্যায়নে থাকছে মিষ্টি, নাড়ুসহ নানান পদ। তবে পূজা সামনে রেখে নাড়ুর চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। কারণ, মা দুর্গার পূজায় ফলমূল, মোয়া, নাড়ু, নারকেল দিতে হয়। লোকজনকেও অ্যাপয়ন করতে হয়। তাই কেউ অর্ডার করছেন, কেউ আবার বাসাবাড়িতে নিজেরাই তৈরি করছেন।

সবখানেই কিন্তু উপকরণ হিসেবে বহুল ব্যবহার হচ্ছে নারকেল ও গুড়ের। দিন যত এগোচ্ছে, সারা দেশে নারকেল ও বিভিন্ন রকম গুড়ের কদর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বাজারে এর বেশ প্রভাবও দেখা গেছে। দামের তেজ টের পাচ্ছেন ক্রেতারা।

কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. সাঈদা খাতুন  জানান, দেশে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টন আখের গুড় হয়। তাল ও খেজুর মিলিয়ে আরও ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন গুড় হয়। গোলপাতা থেকেও গুড় হয়। তবে সেটা খুব সামান্য; ৮ থেকে ১০ হাজার টন। সব মিলিয়ে দেশে বছরে প্রায় ৫ লাখ টন গুড় উৎপাদিত হয়।

অন্যদিকে নারকেলের উৎপাদন বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ  বলেন, দেশে ৪৭-৪৮ হাজার টন নারকেল উৎপাদিত হয়। যদিও দেশে গুড়-নারকেলের চাহিদা সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারা দেশের মতো রাজধানীতে আখ ও খেজুর গুড় এবং ঝুনা নারকেলের চাহিদার চাপ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। তবে দামও গুনতে হচ্ছে বেশি। সরেজমিন গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মাসুম জানান, মানভেদে প্রতি কেজি আখের গুড় বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়; যা আগের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। অন্যদিকে খেজুরের গুড় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।

এই দামে গুড় কিনলে ক্রেতাকে মানের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। একেবারে ভেজালমুক্ত খেজুরের গুড় কিনতে প্রতি কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। কোনো কোনো বিক্রেতা প্রতি কেজির দাম হাঁকছেন ৬০০ টাকাও। অন্যদিকে আকার ও মানভেদে প্রতিটি নারকেল বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি জোড়া নারকেলের দাম ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা।

ক্রেতা পরিমল কুমার বলেন, পূজার মধ্যে নারকেলের নাড়ুসহ অন্যান্য নাড়ুর প্রাথমিক উপকরণ নারকেল ও গুড়। এ সময় তাই চাহিদা, দাম উভয়ই বাড়ে।

রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও চাহিদা বেড়েছে গুড় ও নারকেলের। পূজা উপলক্ষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর শহরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা মিলছে থরে থরে সাজিয়ে রাখা নারকেলের পসরা। তা কিনতে ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা। তবে দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে রয়েছে। পৌর বাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারে নারকেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।

গত পূজায় এক জোড়া নারকেলের দাম ছিল আকারভেদে ৮০-১০০ টাকা। সেই নারকেল এ বছর বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা জোড়া। সে অনুযায়ী প্রতিটি নারকেলের দাম ১২০-১২৫ টাকা। এদিকে বেড়েছে গুড়ের দামও। যে গুড় গত বছর মিলেছে ৭০-৯০ টাকায়, সেই গুড় এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়।

এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে নারকেলের দাম বেশি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এসব নারকেল খুলনা, ভোলা, বরিশাল ও নোয়াখালী থেকে আসে। ব্যবসায়ীদের মতে, কিছু এলাকায় বন্যার কারণে মজুত করা নারকেল পচে গেছে, তাই একটু দাম বেশি।

উপজেলার বলিহারপুরের চঞ্চল রায় জানান, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে সংসারে অভাব থাকে। কিন্তু অভাব যতই হোক, মা দুর্গার পূজায় ফলমূল, মোয়া, নাড়ু, নারকেল তো দিতে হয়। দাম বেশি হলেও কিনতে হবে। শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের গোলাপী রানী বলেন, পূজা চলছে। বাড়িতে বাচ্চারা আছে, অতিথি এলে তাদেরও তো আপ্পায়ন করতে হবে।

 

 

বার্তাবাজার/এসএম