দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট এবং গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা সীমানায় অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে নতুন সুপার স্ট্রাকচার ব্রীজ নির্মান কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পুরাতন ব্রীজটি ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ নির্মান কাজ শুরুর আগে পাশেই অস্থায়ী বিকল্প কাঠের সেতু নির্মান করে সওজ। তবে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নদীর হালকা পানি বৃদ্ধিতে অস্থায়ী সেতুর কিছু অংশ পানিতে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও সেতুটির উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি।

এতে অস্থায়ী সেতুটি দিয়ে পারাপার একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করছে। এতে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট,হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর এবং জয়পুরহাট জেলার সাথে গাইবান্ধা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে চলমান নতুন সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরো কয়েকমাস। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের মে মাসে নতুন ব্রীজের নির্মান কাজ শেষ হবার কথা। বর্ষা মৌসুমের আগেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় নদনদীর পানি আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃদ্ধি পেয়েছে করতোয়া নদীর পানিও। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার অস্থায়ী সেতুটি ছুঁইছুঁই অবস্থায় পানি প্রবাহিত হতে থাকে। এতে নদীর উত্তরপাশ কচুরিপানায় ভরে যায়। অস্থায়ী সেতুটির নিচ দিয়ে কচুরিপানা পার হতে না পারায় পানি প্রবাহেও কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। সন্ধার আগ মুহুত্বে সেতুটি কিছু অংশ ভেঙ্গে যায় এবং রাতে পানি সেতুটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ এই বেইলী ব্রীজ ভাঙ্গার পূর্বে নদী থেকে যথেষ্ট উচুতে মজবুত অস্থায়ী সেতু নির্মান করার কথা থাকলেও, নির্মানাধীন নতুন ব্রীজ থেকে কয়েক ফিট নিচে নদীর পানি ছুঁইছুঁই জায়গায় নামে মাত্র নরবড়ে কাঠের সেতু নির্মান করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সেতুটি নির্মানের পর থেকেই মানুষ পারাপার হবার সময় হেলেদুলে বেড়াত সেতুটি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছে তারা শুরু নতুন ব্রীজ নির্মান করবে। অস্থায়ী বিকল্প সেতু নির্মানের কোন চুক্তি তাদের সাথে হয়নি। নির্মান করা বিকল্প সেতুটি সড়ক বিভাগ নির্মান করেছে। এদিকে সওজ বলছে পুরাতন বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে নতুন সেতু নির্মান প্যাকেজে অস্থায়ী কোন সেতু নির্মানের কোন অনুমোদন নেই। তবুও সাধারণমানুষের যাতাযাতের কথা বিবেচনায় তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অস্থায়ী একটি কাঠের সেতু নির্মান করেছে। এই সেতুটির উপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন জেলার প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষের যাতাযাত করে। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য রংপুরে যাতায়াত করে বড় একটি অংশ।

অস্থায়ী সেতু ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে রংপুর কিংবা গাইবান্ধা জেলায় যাতায়াতের জন্য গোবিন্দগঞ্জ দিয়ে ঘুরে যেতে হবে। এতে দুরত্ব বাড়বে প্রায় ২৩ কিলোমিটার। অস্থায়ী সেতুটি দিয়ে হেটে পারাপারের সময় তৌহিদুল ইসলাম নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন,পুরো টাকা পকেটে ঢুকিয়ে নামেমাত্র একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু নির্মান করেছে সওজ। এটি জনগণের সাথে তামাসা করা ছাড়া আর কিছুই না।

এখন আমরা হাজার হাজার মানুষ কিভাবে যাতাযাত করবো!স্থানীয় তপন দাস বলেন,খড়া মৌসুমে নদীতে যখন পানি কম ছিলো,তখন নদীর পানি থেকে ২ হাত উচ্চতায় কাঠের সেতু নির্মান করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কাঠের সেতুটি ডুবে যাবে এটাই স্বাভাবিক।সেতুটি নির্মানকারীরা জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে ইচ্ছেকৃত ভাবেই এই কাজটি করেছে।

এদিকে গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আখতার বলেন, চলমান ব্রীজ নির্মান প্যাকেজে বিকল্প সেতু নির্মানের কোন ব্যবস্থা নেই। তবুও হেটে যাতায়াতের জন্য একটি অস্থায়ী সেতু আমরা তৈরি করেছিলাম। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে দুটি নৌকা সেখানে দেওয়া হয়েছে জনসাধারণের পারাপারের জন্য। একটু কষ্ট হলেও পারাপারের জন্য সকলকে নৌকা ব্যবহার করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই নদীর পানি বৃদ্ধি হলে আমাদের করণীয় কিছু থাকে না। নতুন সুপার স্ট্রাকচার ব্রীজ নির্মান কাজ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন ব্রীজের নির্মান কাজ ৪০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ব্রীজটির সর্বশেষ গার্ডার নির্মান শেষ হবে। এতে ব্রীজের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে।

বার্তাবাজার/ রাহা