ইরানে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এ তথ্য খোদ দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও আভাস দিয়েছে, ইরানে ইসরায়েলের হামলা আসন্ন। তবে তারা তেহরানের পারমাণবিক কিংবা তেল স্থাপনায় হামলার পক্ষে নয়। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আরেকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটি এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের সঙ্গে এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে।
হিজবুল্লাহ নেতা হামাস নাসরুল্লাহ, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও ইরানের প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডসের এক কর্মকর্তাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলে ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। ওই হামলায় সেভাবে কেউ হতাহত না হলেও ইসরায়েলের বেশ কিছু সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় মাসের মধ্যে ইসরায়েলে দুবার সরাসরি হামলা চালাল ইরান। ইসমাইল হানিয়া গত ৩১ জুলাই তেহরানে এক হামলায় নিহত হন। ইরান ও হামাস তাঁর মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েল তা স্বীকার করেনি।
মঙ্গলবারের হামলার পর থেকেই প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। তবে ইরানও বলে রেখেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলে ইসরায়েলকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইসরায়েলের সামরিক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর বেশি কিছু তিনি জানাননি। ইসরায়েলের বামপন্থী সংবাদপত্র হারিৎজ সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, দেশটির সামরিক বাহিনী বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলের এই হুঁশিয়ারির বিষয়ে ইরান গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাশি গতকাল আবারও গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য আগের দিন শুক্রবার তেহরানে জুমার নামাজে ইমামতির সময় খুৎবায় দেওয়া বক্তব্যে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের শত্রু হিসেবে অভিহিত করেন। পাশাপাশি তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বকে কৃত্রিম দাবি করে বলেন, দেশটি বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের তেল স্থাপনাগুলোয় হামলা চালানো উচিত হবে না। তিনি আরও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর পক্ষে তিনি। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনী ও ইসরায়েলে হিজবুল্লাহ পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, আগামীকাল ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এর আগমুহূর্তে গাজা ও লেবাননে বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এএফপি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা গতকাল ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফায় রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটিতে ফাদি-১ রকেট হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধও জোরদার হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননজুড়ে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলাও জোরদার করেছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গতকাল তাদের কমান্ডার সাঈদ আত্তাল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি হামলা জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে লেবাননে বাস্তুচ্যুতিও বাড়ছে। এরই মধ্যে বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছাড়ছে। রাজধানী বৈরুতেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজারো পরিবার। তাঁদের একজন ইব্রাহিম নাজ্জাল। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ বন্ধ চাই, যাতে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারি। আমাদের সবার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।’ লেবাননের সরকারি তথ্যমতে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় দেশটির ১ হাজার ১০০ জনের বেশি সাধারণ মানুষের প্রাণ গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের হামলায় লেবাননের সীমান্ত এলাকায় গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহর ২৫০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ইসরায়েল আরও দাবি করেছে, গতকাল লেবাননের বিন্ত জবেইল এলাকায় একটি মসজিদের ভেতর হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করেছে তারা।
বার্তাবাজার/এস এইচ