কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে গরু চুরি। ফলে মোটাতাজা করা কোরবানীর এসব পুশুর নিরাপত্তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকসহ খামারীরা। আর এ কারণে সন্তানের মত লালন পালন করা পুশুকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ পুশুর রশি হাতে নিয়ে গোয়াল ঘরেই ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন। তবুও কিছুতেই থামছে গরু চুরি।

যদিও পুলিশের দাবী, গরু চুরি হলেও কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ না করায় চোর চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।

জানা গেছে, কোরবানী ঈদের বাকী আর মাত্র কয়েক দিন রয়েছে। প্রতি বারের মতো এবারও কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ভৈরবে খামারীসহ প্রান্তিক কৃষকরা গবাদি পুশু লালন পালন করে আসছেন। এ বছর উপজেলায় দশ হাজারের বেশি কোরবানীর পুশু দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছে। ফলে এ উপজেলার চাহিদা মেঠিয়েও আশ পাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এসব কোরবানীর পুশু সরবরাহ করতে পারবে কৃষক ও খামারীরা। এরই মধ্যে গবাদি পুশু মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়া শেষ করেছেন তারা। ফলে হাটে তুলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। কিন্তু প্রতিনিয়তই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অহরহ গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। সন্তানের মত লালন পালন করা এসব পুশুকে চুরির হাত থেকে রক্ষা করতে অনেকেই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পুশুর রশি হাতে নিয়ে গোয়াল ঘরেই ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন। তবুও কিছুতেই থামছে গরু চুরি। তাই, দ্রুত কোরবানীর পুশুসহ এলাকার গরু চুরি বন্ধে কঠোর হবে প্রশাসন, লাগাম টেনে ধরবে অপরাধীদের। এমনটাই প্রত্যাশা ভূক্তভোগীদের।

স্থানীয়দের মতে, সবচেয়ে বেশি উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর, জাফরনগর ও শ্রীনগরসহ আশ পাশের এলাকাগুলোতে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে।

ফলে গেল ৩ মাসে ৩০টিরও বেশি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, গোয়াল ঘরে গরু না পেয়ে সংঘবদ্ধ চুর চক্রের সদস্যরা সুযোগ বুঝে দামী মোবাইল ও নগদ টাকাসহ ঘুমন্ত নারীদের কানের দুল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি দুল নিতে গিয়ে কান ছিড়ে ফেলার ঘটনাও একাধিক। ফলে গ্রামগুলোতে নিত্যদিন একের পর এক চুরির ঘটনায় অতিষ্ঠ সাধারণ লোকজন। চুরি হয়েছে খোদ ইউপি চেয়ারম্যানের গরুও। গ্রামের কৃষকের একমাত্র নগদ টাকার সম্বল গরু চুরি হওয়া অনেকে নিঃস্ব হয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। অথচ, এসব গরু চোরদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

ফলে বাধ্য হয়ে সম্প্রতি ভবানীপুর জামে মসজিদে জুমার নামায শেষে উপজেলার শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সভা করেছে গ্রামবাসী। সভায় গ্রামে রাত দশটার পর চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে অপরিচিত লোকজনকে চোর সন্দেহ হলে আটক করে রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে গতকাল বুধবার রাতে গরু চোর সন্দেহে শাকির নামে এক যুবককে আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসি। শাকির উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

চুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রীনগর ইউনিয়নের সুজন মিয়া, আক্কাস মিয়া ও আবুল হোসেন বলেন, আমরা সব সময় গ্রামে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছি। চুরি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। চোর চক্রের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।

এ বিষয়ে শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ ভূইয়া জানান, গরু চুরিসহ অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আইন শৃংখলার মাসিক সভায় জোড়ালো আলোচনা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ফলে সমাজে অপরাধ বেড়েই চলছে বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়াও হঠাৎ করে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে কোরবানীর পুশু চুরি ঠেকাতে প্রান্তিক কৃষক ও খামারীদের আরও সচেতন হতে এবং নিজেরাই নিজেদের খামারের নিরাপত্তা বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ।

তিনি আরও জানান, এ নিয়ে মাসিক মিটিংয়েও আলোচনা হয়েছে। এমসয় পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের লোকজনসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সবার সমন্বয়ে অচিরেই অভিযান চালানো হবে।

 

বার্তাবাজার/এম আই