শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কীর্তিনাশা নদের দুই পাড় থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন। নদীর দুই পাড় থেকে বালু উত্তোলন করছেন মিজান সিকদার নামে এক অসাধু বালু ব্যবসায়ী। অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তলনের ফলে নদের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের কাছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী মিজান সিকদারের তালিকা থাকলেও ‘বালুখেকো’ মিজান সিকদারকে ধরতে চোর-পুলিশ খেলা খেলছেন প্রশাসন।

এমন অবস্থায় বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নদের পাড়ের শতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মহাসড়কসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকাশ্যে মিজান সিকদার বালু উত্তোলন করলেও তা বন্ধে প্রশাসনের তেমন ভূমিকা নেই। জানা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার নতুন বালার বাজার এলাকার দুটি পয়েন্ট থেকে কার্টার ড্রেজার দিয়ে কীর্তিনাশা নদীর তীর থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রাতদিন সমানতালে অবৈধভাবে ওই নদী থেকে বালু উত্তলন করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মিজান সিকদার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে হাতি নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। নদী তীরবর্তী ড্রেজার প্রতি সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিতে হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এবং কৃষিজমি কাটার জন্য গুনতে হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

হারুন পাটোয়ারী নামে এক ড্রেজার ব্যবসায়ী বলেন, আমি ও মিজান সিকদার এই দুটি ড্রেজারের পরিচালনা করি। প্রশাসনকে ম্যানেজ না করে এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব না। সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পরই মৌখিকভাবে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ করে দেন। মাটি ও বালু মহলের চাঁদার টাকা নিচ থেকে উপর মহল সবখানে পৌঁছানোর পরে এ ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু মাটি উত্তোলন অব্যাহত থাকলে এ বর্ষায় নদীর পাড় এলাকার ফসলি জমি, ঘর-বাড়িসহ সরকারি স্থাপনা মারাত্মকভাবে নদী ভাঙনের কবলে পড়বে। এসব বালু মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় এবং প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

বালার বাজার এলাকার বাসিন্দা আমেনা আক্তার বলেন, ‘সব সময় নদীর নিচু এলাকা দিয়েই পানির প্রবাহ বইতে থাকে। তাই বর্ষার সময় পানির প্রবল স্রোতে নদীর পাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। একবার ভাঙন শুরু হলে আশপাশের গ্রামগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।’ ফেলুরচর এলাকার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে বর্ষা এলেই নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়। তখন আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। স্থানীয় মিজান সিকদার ও হারুন বেপারী প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে। ভয়ে সাধারণ লোকজন তাদেরকে কিছুই বলতে সাহস পায় না।’ মানবাধিকারকর্মী এস.এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ভেদরগঞ্জ উপজেলার নদী ও কৃষি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে মাসে কোটি টাকার ব্যবসা করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে জড়িত আছেন রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, অসাধু সরকারি কর্মচারীসহ অনেকে। রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বালু ব্যবসায়ীরা। তবুও প্রশাসন নিশ্চুপ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান‚‘ নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তলন এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এই মুহুর্তে বালু উত্তলন বন্ধ না হলে এই বর্ষায় আমাদে অঞ্চলের বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। বালু উত্তোলনকারীদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনকে দিয়েছি। আপনারাও অনেক লেখালেখি করেছেন কই বালু উত্তলন তো বন্ধ হচ্ছে না’। এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাদিয়া জেরিন মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তালিকা করে নিয়মিত মামলার আওতায় আনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যৌথবাহিনির সাথে কথা হয়েছে খুব শিগগিরই বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।

বার্তাবাজার/এস এইচ