সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাব থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ একটি আজ এই আদেশ দেন।
বহুল আলোচিত সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চেয়ে আনা রিটের আদেশ মডিফিকেশন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আজ এই আদেশ দেন উচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে আজ শুনানিতে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা কেবল তাদের পরিবারের জন্যই নয়, এটা দেশের সকল নাগরিকের জন্য এক দুঃখজনক ঘটনা বলে অবিহিত করে হাইকোর্ট বলেন, ‘আশাকরি এবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং তদন্তের জন্য দেয়া ছয় মাস মানে ছয় মাসই।
উচ্চ আদালত আজ আদেশে বহুল আলোচিত এই মামলা তদন্তে বিভিন্ন বাহিনী বা সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে বলেছেন। সেই সাথে আজকের এই আদেশ পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে টাস্কফোর্সকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে এবং এই বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে আজ শুনানিতে রিটের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনিক আর হক, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল রেদোয়ান আহমেদ রানজিব। আর সাগর-রুনির মামলার বাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে শিশু মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। নির্মম এই হত্যাকা-ের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়,পরে র্যাব পায় তদন্তের দায়িত্ব।
বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঘটনার দুই মাস পরেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। ইতোমধ্যে একযুগ পার হলেও আজ পর্যন্ত মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এই পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১১১ বার সময় নেয়া হয়েছে।
নির্মম এই হত্যাকা-ের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনীদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তা শুধু কথার কথা হিসেবেই ছিল। সাগর রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে ডিইউজে, বিএফইউজে, ডিআরইউসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন দাবী জানিয়ে আসছে। এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আগামী ১৫ অক্টোবর তারিখ ধার্য রয়েছে ঢাকার একটি আদালতে।
উল্লেখ্য, র্যাব এই মামলার তদন্তে নেমে গ্রেফতার আট আসামি, নিহত সাগর-রুনি এবং স্বজনসহ ২৫ জনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে পাওয়ার পর অপরাধ চিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনা করে দুইজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পেয়েছে। তবে তাতে সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি বলে সূত্র জানায়।
প্রধান বিচারপতি ড.সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২১ সেপ্টেম্বর সারাদেশের বিচারকদের উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে বলেন, ‘আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকা-ের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ১১১ বার সময় নেয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্ত কাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ সময়ের আবর্তে মামলার অনেক সাক্ষী ও সাক্ষ্য হারিয়ে যায়।
সাগর-রুনি হত্যা মামলায় এক যুগ পর বাদী পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি গতকাল সাংবাদিকদের জানান। আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করব।
বার্তাবাজার/এসএম