শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পশ্চিম রায়ের কান্দি গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক রুবিনা আক্তার(৩৪) ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পাঁচদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার নিজ বাড়ীর পিছনের একটি বাঁশ বাগানে পাওয়া যায় তার লাশ। পরে ঐ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের ভাই সামসুল হক মুন্সি অজ্ঞাতনামা আসামী করে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর এই হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আসামীরা সকলেই জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

মামলার প্রেক্ষিতে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালিক জাজিরা উপজেলা যুবলীগ নেতা ও নিহতের ভগ্নীপতি কামাল মাদবর ওরফে তমি কামালসহ ২ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে জাজিরা থানা পুলিশ। এর কিছুদিন পরেই আটককৃত আসামীরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।

ঐ মামলায় পুলিশ ২০১৯ সালের মার্চ মাসে কামাল মাদবর ওরফে তমি কামাল সহ ৫ জনকে আসামী করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন(চার্জশিট) জমা দেয় আদালতে। চার্জশিটভুক্ত বাকী আসামীরা হলেন, মেহেদী হাসান, মো: রাসেল মাদবর, সজিব হোসেন মাদবর ও রাকিব শাহ কিন্তু উক্ত চার্জশীট সঠিক নয় দাবী করে আসামী কামাল মাদবর ওরফে তমি কামাল হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। গত আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে দায়েরকৃত ঐ রিটটি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

এবিষয়ে নিহত শিক্ষক রুবিনা আক্তারের ভাই ও মামলার বাদী সামসুল হক মুন্সি বলেন, “আমার বোনের খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি আইনের লড়াই চালিয়ে যাবো। এতে আমার যত কষ্টই হোক। ওদের মত নরপশুদের ছাড় দিলে আমার বোনের মত আরো অনেকের বোন এমন নৃশংসতার শিকার হবে। আমার বোনের হত্যাকারীরা প্রতিনিয়ত আমাকে মামলা ছেড়ে দিতে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে কিন্তু আমি ভয় পাইনা। আমি আমার বোনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

মামলায় বাদী পক্ষের হাইকোর্টের আইনজীবী খান মাহমুদুল হাসান বলেন,”বিবাদী পক্ষ পুলিশের দেয়া চার্জশীটের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছিল। সেই রিট এবছরের গত আগস্টে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এখন মামলাটির পরবর্তি কার্যক্রম জেলার নিম্ন আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এতে শরীয়তপুরের সেশন জজকে দুই মাসের মধ্যে এ মামলায় পূর্বে পুলিশের দেয়া চার্জশিট বহাল থাকা কিংবা পুনঃতদন্ত হওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।”

জাজিরা উপজেলার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সি এম এনামুল হক বলেন, “আমাদের সহকর্মী রুবিনা আক্তারকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিচার আরো দ্রুত হওয়া উচিৎ ছিল। আমরা শিক্ষক রুবিনা আক্তারের হত্যাকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আশা করি হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”

নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী সংগঠন নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চের আহবায়ক জামাল মাদবর বলেন, “শরীয়তপুরের জাজিরায় ২০১৫ সালে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার হেনাকে ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের পর ৯ বছর পেড়িয়ে গিয়েছে। ওই হত্যাকান্ডের মামলায় সকল আসামীরা খালাস পেয়েছে। আর রাস্ট্রপক্ষ দোষীদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায় দেয়া হয়েছে। শিক্ষক রুবিনা আক্তার হত্যাকান্ডের মামলায়ও আজ ৬ বছর। অথচ এমন সব চাঞ্চল্যকর হত্যকান্ডের ঘটনায় বিচারকার্য নিরপেক্ষ ও দ্রুত পরিচালিত হওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে অন্তত বার বার আমাদের এমন নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হতে হতোনা। আশা করি শিক্ষক রুবিনা আক্তারের পরিবারকে ন্যায়বিচার দিতে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপণে পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

উল্লেখ্য; স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রুবিনা আক্তার জাজিরা উপজেলার বড় মুলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করার জন্য জাজিরা উপজেলা সদরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন রুবিনা আক্তার। এরপর আর ফিরে আসেননি। তিনি বাড়ি না ফেরায় ২২ সেপ্টেম্বর তার ভাই সামসুল হক মুন্সি জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাড়ির কাছে একটি বাঁশ বাগানে বাঁশের সঙ্গে ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় লাশের সন্ধান পেয়ে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।