মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহার আর বাকি ৮দিন। এই ঈদকে ঘিরে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় জমে উঠেছে জমজমাট পশুর হাট। সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার বসছে ঐতিহ্যবাহী রাণীগঞ্জ গরুর হাট। বছর জুরে সপ্তাহের এই দুদিনই বসে হাট। তবে কুরবানীর ঈদকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও জমজমাট হয়ে উঠেছে বৃহৎ এই পশুর হাট।

৫০ বছরের পুরোনো এই পশুর হাটে কুরবানীর ঈদের আগে হাটবারে কোটি টাকার গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। ঈদের শেষ দুই হাটে সেখানে কেনাবেচার পরিমান দাঁড়ায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকায়। এমনটি দাবি সংশ্লিষ্ট ও হাট কতৃপক্ষের। শুধু আশপাশের জেলা-উপজেলা নয়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকেও গরু ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসে গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে।

দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এই পশুর হাটটি লেগে আসছে ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন রানীগঞ্জ বাজারে। তবে জায়গা সংকুলান না হওয়া সহ নানা সমস্যার কারণে এই বছর হাটটি প্রায় ৬০০ মিটার দুরে নান্তরিত করেছে হাট কতৃপক্ষ। হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে হাটবার সেখানে স্থায়ী ক্যাম্প নির্মান করেছে থানা পুলিশ।

হাটের দিন সকাল থেকেই পোশাক পরিহিত ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। গত সোমবার নতুন জায়গায় পুরাতন এই হাট লাগে। হাট ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃত ফসলের মাঠে ১৪ বিঘা জায়গা জুড়ে হাট লাগানো হয়েছে। হাটের চারপাশে স্থায়ী খাবারের দোকান ও হাট অফিস নির্মান করা হয়েছে। কুরবানীর ঈদ উপলক্ষে ওইদিন সকাল থেকে ট্রাক, পিকআপ,নসিমনে দেশী বিদেশী বিভিন্ন জাতের গরু হাটে নিয়ে আসতে থাকে গরু ব্যবসায়ী, খামারী ও বাড়িতে গরু পালনকারীরা। পুরো হাটকে চারটি পৃথক ভাগে ভাগ করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে হাট কতৃপক্ষ। সাইনবোর্ড অনুযায়ী এসব জায়গায় বিভিন্ন আকৃতির ষাড়, গাভী, বকনা ও ছাগল বেচাকেনা হচ্ছে। হাটে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার পশুর উঠেছে। পছন্দ অনুযায়ী দর কষাকষিতে ব্যস্ত ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ভ্যাট সহ ছাগল প্রতি ১৮০ টাকা এবং গরু প্রতি ৫০০ টাকা হাটের চাঁদা আদায় করছে হাট ইজারা কতৃপক্ষ।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, প্রতি ১ বছর পর পর এই হাট ইজারা দেয় প্রশাসন। তা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব পায় সরকার। চলতি বছর ২ কোটি ১৭ লাখ টাকায় ঐতিহ্যবাহী এই হাটটির ইজারা পেয়েছে নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। গত বছর এই ইজারা মূল্য ছিলো ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। হাটে ঢাকা থেকে কুরবানীর পশু কিনতে এসেছিলেন মাজফুজার রহমান।

তিনি বলেন, গত ২ বছর আমি এই হাট থেকেই কুরবানীর পশু কিনেছি। তুলনামূলক কম দামে ভালো মানের গরু এখানে পাওয়া যায়। তাজেদুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, আমি নেত্রকোনা থেকে হাটে এসেছি। বিভিন্ন সাইজের ২০ থেকে ৩০টি গরু কেনার টার্গেট আছে। এখানে থেকে কিনে নিয়ে গরুগুলো ঢাকায় বিক্রি করবো।

তাতে বাড়তি লাভ হবে। ইসাহাক আলী নামের এক খামারী বলেন, আমি পাশ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে গরু বিক্রি করতে এসেছি। এ বছর নতুন জায়গায় হাট বসেছে। জায়গাও বিশাল। নতুন অনেক সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে এখানে। পাশাপাশি স্থায়ী ভাবে পুলিশ থাকায় আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। হাটের ইজারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, পুরাতন হাটের পাশে একটি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। হাটের দিন শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হওয়ার কারণে এই বছর হাট অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। কুরবানীর ঈদ উপলক্ষে আমরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি ।

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান কবির বলেন, বৃহৎ এই হাটে কোটি কোটি টাকার কারবার হয়। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা হাটে পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করেছি। হাটে আসা সকলে নিরাপত্তার সাথে হাট থেকে ফিরে যেতে পারবে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এই হাট থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া পশুর চামরা যাতে কোন অবস্থাতেই নষ্ট না হয়। সে জন্য আমরা হাট কতৃপক্ষকে ক্রেতাদেরকে সচেতন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজনে ক্রেতাদেরকে হাট কমিটির পক্ষ
থেকে লবণ উপহার দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

বার্তাবাজার/রাহা