গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর তারই দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। এরই প্রেক্ষিতে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ড. রেজা কিবরিয়া। প্রশ্ন তুলেছেন, দলীয় ফান্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে। সেই সাথে ভিপি নূরকে প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কার করারও কথা জানান তিনি।
গতকাল (সোমবার) রাতে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া গণমাধ্যমে এসব অভিযোগ তোলেন।
ড. রেজা কিবরিয়া জানান, প্রবাসে কমিটি গঠন করে নুর যেখানে তিনি নিজেকে প্রধান উপদেষ্টা বানান অথচ দলীয় প্রধান হিসেবে সেখানে আমাকে ওই পদে রাখা উচিত ছিলো। সেই সঙ্গে দলীয় অর্থনৈতিক ফান্ডের অর্থের সঠিক হিসেব দিতে পারেনি নুর। এছাড়াও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তিনি যে বৈঠক করেছেন তা দলের কারও সাথে আলোচনা করেনি।
রেজা কিবরিয়া বলেন, কী কারণে, কেন ওই বৈঠক করলেন এবং বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন কেন? ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? তারা কি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে? নাকি ভিপি নুর টাকা পেয়েছেন? অবশ্য যারা তাকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন তারা জানিয়েছেন, বৈঠকের পর ‘কালো একটি ব্যাগ’ নিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেছেন। টাকা-পয়সা নিয়ে তিনি কী করেছেন? নিজের স্বাক্ষরে কেন করেছেন– জানি না। আবার ভারতসহ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকের সঙ্গেও গোপন বৈঠক করেন নুর। অথচ দলের আহ্বায়ক হিসেবে আমি তা জানি না। এসব কারণে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভিপি নুর এখন বড় নেতা হয়ে গেছেন! রাজনীতি বেশি বোঝেন! আমি তার কথায় চলি না– এসব কারণে সংকটের সমাধান হবে না। আমি আইএমএফের বড় চাকরি ছেড়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। সারাজীবন হালাল টাকা-পয়সা রোজগার করেছি। এখন আমার দলের মধ্যে কেন আর্থিক অস্বচ্ছতা থাকবে– এটা তো মেনে নিতে পারি না।
জাতীয় ইনসাফ কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিয়ে নুরের অভিযোগের বিষয়ে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, সরকারবিরোধী যে কোনো দল ও সংগঠনের আন্দোলন কর্মসূচিতে আমি অতীতে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আমি ইনসাফ কমিটির কোনো পদ-পদবিতে নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত– যে ডাকবে, আমি সেখানে যাব।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ভিপি নুর মিথ্যা কথা বলছেন। অর্থ লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন। নুরের নেতৃত্বে দলের ছোট একটি অংশ এসব বলতে পারে। দলের বড় অংশ আমার সঙ্গে রয়েছে। দলের অনেক নেতাই দুঃখ প্রকাশ করে বলছেন, দলের মধ্যে যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকে, তাহলে কীভাবে আমরা প্রমাণ করব– আওয়ামী লীগের চেয়ে আমাদের দল ভালো কিছু করবে?
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বিচার-বিবেচনার সঙ্গে তো নুরের বিচারবোধ এক হতে পারে না। আমার বয়স, অভিজ্ঞতা তার চেয়ে বেশি। তিনি যে লেভেলে বড় হয়েছেন, সেই লেভেলেই চিন্তা করবেন। এটিই স্বাভাবিক। আমি বাংলাদেশে এসেছি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য; রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে। আমি তো নুরের মতো পরিবার থেকে আসিনি। তার কাছ থেকে আমার শেখারও কিছু নেই। তবে এখন আমার অনুমতি ছাড়া কোনো বৈঠক হবে না। আমি চিঠি ইস্যু করেছি। নুর দলকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এর আগে সোমবার রাতে নুরুল হক নুর তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দলের গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।
বার্তাবাজার/এম আই