শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তবে প্রাথমিক শিক্ষা এর মূল ভিত্তি। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার গৃহিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত সকলের সক্রিয় ভূমিকা থাকা আবশ্যক। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে, শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো প্রয়োজন। একটি উন্নত বীজ থেকে উন্নত ফসল উৎপন্ন হয়। শিক্ষক যদি মানসিক ভাবে স্বতস্ফুর্ত থাকে তবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যবস্থা মানসম্মত হবে।

উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের দিকে সরকারের দৃষ্টি বেশি। আমাদের দেশে এই প্রেক্ষাপট তৈরি করা আবশ্যক। শিশুদের শিখন-শেখানোর পরিবেশ আনন্দ-মুখর ও শিশুবান্ধব করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান শ্রেণিকক্ষে যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। শিক্ষা অফিসার মহোদয় নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করে পরামর্শ প্রদান করতে হবে। শিক্ষকগণ বার্ষিক ও দৈনিক পাঠ-পরিকল্পনার আলোকে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করে শ্রেণি কার্যাবলী পরিচালনা করতে হবে। ক্যাচমেন্ট এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে উন্নয়ন মূলক কাজে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাগার, সীমিত পরিসরে বিজ্ঞানাগার কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে পাঠদান করাটা জরুরী। কনটেন্টগুলো অবশ্যই দৃষ্টিনন্দন ও শিশুর চাহিদা সম্পন্ন হতে হবে।

মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান করতে হবে। সবসময় মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস না নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে পাঠদান করতে হবে। পাঠদানে উপকরণ ব্যবহার করে হাতে কলমে শিক্ষাদান করা খুব প্রয়োজন। শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা ক্রমিক কার্যাবলী চালাতে হবে এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বক্তিগত প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। নিয়মিত যোগাযোগের জন্য অভিভাবক রেজিস্ট্রার তৈরি করে যোগাযোগ করতে হবে। মা সমাবেশ, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অভিভাকদের সচতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। হোমভিজিটের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমাতে হবে। দৈনিক সমাবেশের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত, শপথ বাক্য, শিক্ষামূলক স্লোগান কার্য্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য উপজেলা রিসোর্স সেন্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইন্সট্রাক্টরগণ প্রতিদিন কমপক্ষে দুইটি বিদ্যালয় মনিটরিং করা জরুরী। বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর হচ্ছে সময়সূচী। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪.১৫ মিনিট কিন্তু যার বিরতি মাত্র ৩০ মিনিট। একজন শিক্ষক এত কম সময়ে খাওয়া এবং নামাজ অসম্ভব। শিক্ষার্থীদেরও মানসিক চাপ কাজ করে। শিক্ষকদের উপযুক্ত মর্যাদার আসনে আসীন করলে ভাল ফল আসবে।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মূলত কয়েকটি দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। যেমন: শিক্ষকের জীবনমান বাড়ানো, শিক্ষকদের মথাযথ প্রশিক্ষণ পাঠসংশ্লিষ্ট উপকরণ সরকার কর্তৃক বিদ্যালয়ে প্রদান। সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পর্যাপ্ত মনিটরিং (উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং রিসোর্স সেন্টারের) বিদ্যালরের অকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়কে শিশুবান্ধব করে তোলা। দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, দক্ষজনশক্তি, সূখী ও বৈশ্বিক নাগরীক গড়ে ভুলতে হলে শিক্ষকগণের অবশ্যই আন্তরিক ও পরিশ্রমী হতে হবে।
লেখকঃ সেলিনা বেগম, সহকারী শিক্ষক, আলফাডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর।

বার্তাবাজার/এমআই