বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) এর সমন্বয়কের পদ থেকে আহসান লাবিবকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাবির সমন্বয়কবৃন্দদের পক্ষ থেকে দেয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (জাবি) সমন্বয়ক আরিফ সোহেল এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট ও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

সমন্বয়কদের ওই আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতায় অংশগ্রহনের অভিযোগ থাকায় আহসান লাবিবকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত এই অব্যাহতি বহাল থাকবে। তদন্তসাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বান জানাচ্ছে।”

এদিকে, জাবি’র প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীম মোল্লার মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষ শোক প্রকাশ করেছে এবং একটি তদন্ত কমিটি দ্বারা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলেও জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়।

বৃহস্পতিবার জাবি’র জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দ্বারা এ বিষয়টি জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে, গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের ৩৯-তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা ক্যাম্পাসের প্রান্তিক গেইটে গণপিটুনির শিকার হন। পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শোক এবং দুঃখ প্রকাশ করে তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।

আজ এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে, গতকাল আনুমানিক সন্ধ্যা ৫:৫০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেইটে শামীম মোল্লাকে কতিপয় ব্যক্তি মারধর করতে থাকে। এ খবর প্রক্টরিয়াল টিম জানতে পেরে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রাশিদুল আলমসহ প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রক্টর অফিসের একটি কক্ষে রাখেন। এ সময় আশুলিয়া থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়। কিছুক্ষণ পর কতিপয় ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল টিমকে না জানিয়ে জোরপূর্বক শামীম মোল্লাকে প্রক্টর অফিসের পাশে অবস্থিত নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রাশিদুল আলম ঘটনাটি জানতে পেরে নিরাপত্তা অফিসে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দেয় এবং নিরাপত্তা অফিসের কলাপসিবল গেইট তালাবদ্ধ করে দেয়। নিরাপত্তা অফিসের কলাপসিবল গেইট ভেঙ্গে কতিপয় ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করে শামীম মোল্লাকে আবারও মারধর করে।

এ সময় প্রক্টরের নেতৃত্বাধীন প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তাগণ নিজেরা ঢালস্বরূপ শামীম মোল্লার সামনে দাড়িয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিবৃত্ত করে। রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টায় পুলিশ প্রক্টর অফিসে আসেন। পুলিশ খোঁজ-খবর নিয়ে জানান, শামীম মোল্লার নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রাত আনুমানিক ৮টায় প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখা আবারও ঢালস্বরূপ শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ফোন করে জানান যে, শামীম মোল্লা স্থানীয় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেকোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করে। কর্তৃপক্ষ শামীম মোল্লার ওপর হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। একইসাথে, এ হামলার যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল (বুধবার) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকসংলগ্ন একটি দোকানে শামীম মোল্লা অবস্থান করার খবর পায় একদল শিক্ষার্থী। পরে তাকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তাকে নিরাপত্তা শাখায় নেওয়া হয়। সেখানেও শিক্ষার্থীরা তাকে আবার গণধোলাই দেন।পরে আশুলিয়া থানার পুলিশের কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ নিয়ে যাবার পরে রাত ১০টায় আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।

 

বার্তাবাজার/এসএম