ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন থেকেই খুলনার কয়রা উপজেলায় বিএনপি সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাসস্ট্যান্ড, ঘের ও জমি দখল, ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি, অর্থের বিনিময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আশ্রয় ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বাবুলের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চাঁদা না দেওয়ায় তার নেতৃত্বে ৫৫ বছরের বয়স্ক এক বৃদ্ধ বিএনপি কর্মী ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়াসহ ৫টি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সদরে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসময় মুনছুর আলী নামে এক দোকান মালিককে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছেন বাবুল ও তার সহযোগীরা।

এ বিষয়ে আহত মুনছুর আলীর ভাতিজা মনিরুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুলের সঙ্গে রাজনীতি করি না। এজন্য আমাকে বেশ কিছুদিন ধরে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে আমাকে ফোনে হুমকি দেয় এবং বলে তুই বাজারে ব্যবসা করতে পারবি না। কয়রা বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমি ফোনে এর প্রতিবাদ করি।

মনিরুজ্জামান বলেন, আমি প্রতিবাদ করায় বাবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ২০ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আমাদের পাশাপাশি ৫টি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় আমার ছোট চাচা ব্যবসায়ী মুনছুর আলীর পা ভেঙে গেছে এবং আমার ছোট ভাই মিলন, চাচাতো ভাই আল মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুল বলেন, এখানে জমাজমি ও টাকা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এজন্য তাদের বসার কথা ছিল। কিন্তু মনিরুজ্জামানরা হাজির না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। কথা বলার মধ্যে আমার ওপর তারা ক্ষিপ্ত হয়। পরে আমি ওই স্থান থেকে চলে আসি। তখন মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।

বাবুল বাহিনীর হামলায় আহত মুনছুর গাইন (৫৫), আল মামুন (৩০) এবং নুরুল হুদা (৫০) নামের তিনজন গুরুতর আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিক কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে মুনসুর গাইনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জানতার অভ্যুত্থানের পর কয়রা থানায় ঘাট দখল, ঘের দখল, জমি দখল, চাঁদাবাজি ও লুটপাটসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বাবুলের বিরুদ্ধে। তাদের দাপটে কয়রায় সাধারণ জনগণ এখন অতিষ্ঠ। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেন না!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়রা বাসস্ট্যান্ড এলাকার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বাবুল কয়রা বাসস্ট্যান্ড দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগের মতোই চাঁদাবাজি শুরু করেছে। এ ছাড়া ঘের দখল, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বাবুলের বিরুদ্ধে। তার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা ও লুটপাটের খবর কয়রার সাধারণ মানুষের কাছেন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে কয়রা থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাহ আলম বলেন, দুপুরে কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সামনে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্য মারামারির ঘটনা ঘটে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। তবে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পায়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।