অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখন ভোক্তাদের জন্য সহনীয় নয়। এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু মূল্য নির্ধারণের দুদিন পার হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

নতুন মূল্য অনুযায়ী প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা, সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। এতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

এদিকে ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে আমদানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ ডিম দেশের বাজারে এসেছে। তাতেও যেন পুষ্টিসমৃদ্ধ এ পণ্যটির দাম কমছে না। উল্টো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি ডজন ডিমে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি দেশের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় কয়েকটি জেলায় পোলট্রি খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ওইসব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। তাছাড়া ভারত থেকে আসা ডিম চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত না হওয়ায় এ পণ্যের দাম কমছে না।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার ও উত্তর বাড্ডা এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

রাজধানীর বাজারগুলোতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ফার্মের মুরগির প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা করে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬৫ ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে।

জানতে চাইলে মহাখালী বাজারের ব্যবসায়ী মতিন মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন এ বাজারে মুরগি বিক্রি করি। এতদিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার যতই মূল্য নির্ধারণ করে দিক না কেন, পাইকারি বাজারে দাম কমাতে না পারলে খুচরা বাজারে দাম বেঁধে দেওয়ার কোনো প্রভাব পড়ে না। কারণ বেশি দাম দিয়ে কিনে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা লস দেওয়া খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয়।

মূল্য নির্ধারণ সরকারের একতরফা প্রক্রিয়া বলে অভিযোগ করেন কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন। তিনি বলেন, সরকার যখন কোনো ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তখন কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে না। এতে করে সরকারের বাজারবিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত সফলতার মুখ দেখেনি।

তিনি আরও বলেন, এর আগেও বহুবার সরকার ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছে। খুচরা বাজারে অভিযান জরিমানাও করেছে। তাতেও সরকারের পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য সবার আগে পাইকার ও উৎপাদকদের নীতিমালার আওতায় নিয়ে এলে ও তদারকি করলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে।

এর আগেও বিভিন্ন সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোগ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিতে দেখা যায় সরকারকে। সর্বশেষ গত বছর সেপ্টেম্বরে আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু ওই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি। এর জন্য বাজার মনিটরিংকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া পর্যন্ত সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধান কাজ। এরপর বাজার মনিটরিংয়ে তাদের খুব একটা দেখা যায় না।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের দৈনিক চাহিদা, পণ্য উৎপাদন ও এর সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা ছিল কৃষি অধিদপ্তরে কাজ। কিন্তু তারা এতে অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছে। তাছাড়া, খাদ্য ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার জন্য দেশের পোলট্রি সেক্টরের অস্থিরতা কমছে না। এর জন্য সরকারও তাদের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করতে পারছে না।’

বার্তাবাজার/এমআই