চলতি বছরের বর্ষার আগেই সম্ভাব্য প্রথম দফা প্রত্যাবাসনের আগে মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখতে দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যাচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে উৎসাহিত করার জন্য কনফিডেন্স বিল্ডিং পদক্ষেপের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল রাখাইন সফর করবে। আগামী শুক্রবার (৫ মে) রাখাইন সফর করার কথা রয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রথম দফায় ১ হাজার ১০০-এর বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুত তাদের ফেরত পাঠানো হবে।

বুধবার (৩ মে) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রস্তাব দিয়ে আসছিলাম। এতদিন পরে মিয়ানমার তাতে সম্মতি দিয়েছে।’

গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন-সংক্রান্ত এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কুনমিংয়ে চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বৈঠক করেছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মিয়ানমার ও চীনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বর্ষার আগে প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া গত মার্চে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ মোট ১১টি দেশের কূটনীতিকদের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা বিভিন্ন কাঠামো ঘুরিয়ে দেখানো হয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ফেরত যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাস দিতে হবে এবং এ জন্য তাদের সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখানোর জন্য রাখাইন সফর করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সফরের এক সপ্তাহ পর মিয়ানমার থেকে একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে আসবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, এর আগে চীনের মধ্যস্থতায় দুবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ওই অভিজ্ঞতা থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক চাপ:
আগামী ২৪ মে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার কাগজ জমা দিতে হবে মিয়ানমারকে। তার আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার একটি তাগিদ আছে তাদের পক্ষ থেকে।

এ বিষযে একটি সূত্র জানায়, চীনের কুনমিংয়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কয়েকটি বিষয়ে এখনও মতপার্থক্য আছে। এ ছাড়া এ বছর আরও ছয় হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

মতপার্থক্য বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ করে সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রত্যাবাসনের কথা রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার তাদের প্রস্তুতির ঘাটতির জন্য প্রতিদিন ৩০ জন করে নিতে চাইছে।

বর্তমান প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ও সম্ভাব্য ছয় হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্য আগামী ডিসেম্বরে আবার বৈঠক হবে বলে জানান তিনি।