আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে নৃশংস ধর্ষণের পর খুনের ঘটনাকে ঘিরে এখনও উত্তাল কলকাতার রাজনীতি। এরিমধ্যে, এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাসপাতালটির সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। রোববারই ওই দুজনকে আদালতে উপস্থাপন করে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ও বিক্ষোভের পর এখন দায়িত্ব পালন থেকে বিরতি রয়েছেন রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকরা। অচলাবস্থা নিরসনে বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আলোচনাও ভেস্তে যায়।
এই আলোচনার দিকে তাকিয়ে ছিলেন গোটা রাজ্যের মানুষ। নবান্নের সভাঘরে জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের আগের শর্ত গোটা বৈঠকের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’-এর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
কেন লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয় সেই ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্ট যেটা করতে পারে সেটা আমরা করতে পারি না। কিন্তু স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ভিতরে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিচারাধীন থাকলে কিছু নিয়ম মানতে হয়।
এই ঘটনার পর, স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে আচমকাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা হাজির হন সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিক্ষোভরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের আন্দোলন মঞ্চে। সেখানে আন্দোলন মঞ্চ থেকেই আলোচনার ডাক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তার প্রশাসনিক ও পুলিশের কর্তারা।
সেখানে কিছু সময় কাটানোর পর মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটে নিজের বাসায় ফেরেন। আন্দোলনরত ছাত্ররা জানান, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তারা কিছুক্ষণের মধ্যে জানাচ্ছেন। এরপর মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে তার বাসভবনে পৌঁছান বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
নবান্নের পুনরাবৃত্তি কালীঘাটে, ভেস্তে যায় মুখ্যমন্ত্রী-আন্দোলনকারী বৈঠক। দুই পক্ষের অনড় মনোভাবের কারণে আবারও ভেস্তে যায় মুখ্যমন্ত্রী ও আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যেকার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। শেষ পর্যন্ত মমতার চা পানের আহ্বানও ফিরিয়ে দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
কিছুটা অভিমানের সুরে এ সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি বৈঠক করতে তোমরা রাজি নাই থাকো তাহলে চিঠি দিলে কেন? তোমরা আমার সঙ্গে কথা বলবে বলেই আমি দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। এত অসম্মান কেন করছ? তোমাদের বা আমাদের কারোর চিঠিতেই তো লাইভ স্ট্রিমিং-এর কথা ছিল না।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, হাত জোড় করে বলছি মিটিং না করো কিন্তু ভিজ না। তোমাদের বসার জন্য ব্যবস্থাও করা আছে। যদি মিটিং করতে ইচ্ছে না করে অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যাও। আমি আন্দোলন করা লোক। আন্দোলনকে মর্যাদা দিতে জানি বলেই আমি ছুটে গিয়েছিলাম।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তার সাথে দেখা না করে ফিরে আসার কয়েক ঘণ্টা পরই গ্রেপ্তার হন হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডল। মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টে মামলা শুনানির ৭২ ঘণ্টা আগে এই গ্রেপ্তারকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
এই গ্রেপ্তারের পরপরই, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ইঙ্গিত দিয়েছেন আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে তদন্তের মুখোমুখি পড়তে হতে পারে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মমতাকে মিথ্যুক কটাক্ষ করে নাম না করে ইঙ্গিত দেন মমতা তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার।
বার্তাবাজার/এসএম