স্মরণকালের টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের নিম্নাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। কলাতলী সৈকত জোনের হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ জোনে জলাবদ্ধতার কারনে বিপাকে পড়েছে হোটেল ব্যবসায়িরা। তবু থেমে নেই পর্যটক আগমন। বৃষ্টিতে পর্যটকদের হইহুল্লোড়ে মুখরিত সৈকত। শহরের আশেপাশে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান ‘বার্তা বাজার’কে বলেন- বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৫০১ মি.মি বৃষ্টপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের তীব্রতাও বেশি থাকবে, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে, একই সাথে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শহরের কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের প্রধান সড়ক ও আশেপাশের হোটেল গেস্ট হাউসে যাতায়াতের উপসড়ক গুলো হাটু পানিতে নিমজ্জিত। সৈকত সংযুক্ত সুগন্ধা সড়কটিও ডুবে আছে। সীমিত পরিসরে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চলাচল করলেও বাড়তি বাড়া আদায় করছে। এছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক সহ বাজারঘাটা, বড়বাজার, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়ার এলাকার উপসড়ক গুলোতেও পানি জমেছে।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ‘বার্তা বাজার’কে জানান, শহরের নিম্নাঞ্চলের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনার ডেইলে অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরেগেছেন। যারা এলাকায় অবস্থা করছেন তাদের অধিকাংশ রান্না করতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেয়ে রয়েছেন। তাছাড়া দেখা দিয়ে সুপেয় পানির তিব্র সংকট।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃষ্টি থামলেই পানি নেমে যাবে। তবে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভারী বর্ষণের ফলে হোটেল মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পর্যটকেরচেয়ে জলাবদ্ধতার কারনে বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়িরা। যার ফলে ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। তবে শহরের অভ্যান্তরে এমন জলাবদ্ধতা স্মরণাতীত কালে এটাই প্রথম।
ঢাকা পল্লবীর মিনহাজ নামের এক অনলাইন ব্যবসায়ি জানান, তিনি বৃহস্পতিবার ভোরে ৩ দিনের উদ্দেশ্যে পরিবারের ৮ সদস্যদের নিয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট সংলগ্ন একটি তিন তারকা হোটেলে উঠেন। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টির তীব্রতার কারনে হোটেল বন্ধি হয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
এই পরিস্থিতিতে কিছু পর্যটক কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন, পাশাপাশি নতুন পর্যটকদের আগমন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে দূর পাল্লার বাস কাউন্টার গুলো।
সৈকত পাড়ের ব্যবসায়ি রুবেল জানান, বৃষ্টিতেও সৈকতে পর্যটকদের হৈহুল্লোড়ে মুখরিত সৈকত পাড়। তারা বৃষ্টিতে ভ্রমন আর সাগরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি কেনাকাটা করছেন। কিছু কিছু পয়েন্টে পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে পর্যটক আটকা পড়ার যে বিষয়টি প্রচার হচ্ছে সেটা অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন সংবাদ দাবী করে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, অন্তত ২০ হাজার পর্যটক স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজারে অবস্থান করছে। জলাবদ্ধতার কারনে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে তাদের। হয়তো কিছু পর্যটক ফেরত চলে যাচ্ছে সেটা যেমন সত্য, অপরদিকে কক্সবাজারের পরিস্থিতি জেনেও পর্যটকরা প্রতিদিন কক্সবাজার ভ্রমনে আসছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ মাঠে কাজ করছেন।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় মা-মেয়ে সহ দুই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৪ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, শুক্রবার সকালে ঝিলংজায় ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে কাজ করছেন। পাহাড় ও নিম্নাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে।