৯ বছর আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা মেরে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাবের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ৫ নম্বর আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন আবুল খায়ের নামের এক ব্যক্তি। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর বাড়ি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জামমুড়া গ্রামে। পুড়িয়ে দেওয়া বাসটি বাদীর তত্ত্বাবধানে চলত বলে আরজিতে উল্লেখ করেন তিনি।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে সরাসরি এফআইআর হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হককে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সোবহান ভূঁইয়া, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল মজুমদার, উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসে থাকা আট যাত্রী নিহত হন। ঘটনার পরদিন বাসচালক, সহযোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে বাদী জানতে পারেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, পুলিশের তৎকালীন আইজিপি শহীদুল হক, র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদের মদদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বাদীর তত্ত্বাবধানে থাকা বাসটি পুড়িয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ও র্যাবের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উল্টো তৎকালীন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে আইকন পরিবহনের ওই বাসটিতে চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় পেট্রলবোমা মারে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। পরে ২০১৭ সালের ২ মার্চ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দেয় পুলিশ। ওই মামলার প্রধান আসামি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শওকত মাহমুদ, মনিরুল হক চৌধুরীসহ অনেককে আসামি করা হয়।
বার্তাবাজার/এসএম