সিরাজগঞ্জে হযরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরীফ মাজারে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে মাজার বিরোধী মাদ্রাসার ছাত্র ও মৌলভীরা। এসময় মাজারের তিনটি কবর খুড়ে দেহাবশেষ নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) হযরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরীফ মাজারের খাদেম হাফিজুল ইসলাম এসকল তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, (৯ সেপেটম্বর) সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে অবস্থিত মাজার শরীফে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার শিয়ালকোল বাজার এলাকায় মাইকিং করে শত শত লোকজন জমায়েত হয়। পরে মাজার বিরোধী মাদ্রাসার ছাত্র ও মৌলভীরা এঘটনা ঘটায়। এতে স্থানীয় কেউ তাদের বাধা দেয়নি।এদিকে, গত (২৯ আগষ্ট) কাজিপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে অবস্থিত আলী পাগলার মাজার ও গত (৩ সেপ্টেম্বর) সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের ইসমাইল পাগলার মাজার ভাংচুর করা হয়।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, হযরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরীফের মাজারের ৩টি কবর ঘুরে তাঁর ভিতরে থাকা মানুষের হাঁড়, মাথার খুলি দৃর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে। দুইটি খানকা ঘর ও একটি রান্না ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাজারের জরুরী কাগজপত্র ও বিভিন্ন সরংঞ্জাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাজারের দানবাক্স ও ট্যাংক ভেঙ্গে নগদ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাজারের নানা সরংঞ্জাম।

মাজারের খাদেম শিয়ালকোল ইউনিয়নের শিলন্দা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, সকাল ১০টার দিকে শিয়ালকোল বাজারে একদল মাদ্রাসার ছাত্র ও মৌলভীরা জমায়েত হয়ে মাইকে মাজার ভাংচুরের ঘোষনা দেয়। এরপর তারা মিছিল নিয়ে মাজারে এসে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত তান্ডব চালায়। তাদের হাতে ছিলো শাবল, হ্যামার, দুরমুজ, লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালায়। মাজারের ৩টি পাকা কবর ভেঙ্গে কবরের ভিতরে থাকা দেহাবশেষ (শরীরের হাঁড়, মাথার খুলি ও চুল) বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় চারিদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগত লোকজনকে তারা ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে নিষেধ করেন। বিষয়টি তাৎক্ষনিক থানা পুলিশকে জানানো হলেও এ পর্যন্ত তারা কেউ এখানে আসেনি। থানায় গিয়ে ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

 আরও পড়ুনঃ–

এবার মাইকিং করে গুড়িয়ে দেয়া হলো লেংটার মাজার

সিলেটে শাহপরানের মাজারে হামলা, ভাঙচুর

মাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক ও শিয়ালকোল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সিলন্দা গ্রামের হযরত আলী বলেন, বিগত সরকারের আমলে দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে মাজারের কার্যক্রম চললেও কেউ কোনদিন বাধা দেয়নি। অথচ এখন প্রকাশ্যে ‘তৌহিদি জনতার’ নাম ভাঙ্গিয়ে মাজারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হচ্ছে এবং কবর থেকে মানুষের দেহাবশেষ তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা কেমন স্বাধীন দেশ, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, এমন স্বাধীনতা তো আমরা চাইনি। আমরা এই সহিংস ঘটনার বিচার চাই।

মাজারের ভূমিদাতা শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহের বৃদ্ধা মা ওমিছা বেগম বলেন, মানুষের সাথে মানুষের শক্রতা থাকতে পারে। কিন্তু মৃতদেহের সাথে কোন শক্রতা থাকার কথা না। অথচ হামলাকারীরা মাজারে হামলা চালিয়ে আমার ছেলের কবর ঘুড়ে তাঁর দেহাবশেষ নিয়ে গেছে। এটা কেমন শক্রতা। আমি এমন নির্মম ও লোমহর্ষক ঘটনার বিচার চাই।

মাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব কালু বলেন, স্থানীয় বহুলী ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহ ১৫ শতক এবং শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের খাজা সফুরা পাগলী ৫ শতক মিলে মোট ২০ শতক জায়গা ২০০৫ সালে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) দরবার শরীফের নামে ওয়াকফ্ করে দিয়েছেন। এরপর থেকে এখানে দরবার শরীফের কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০০৭ সালে রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা তরিকায়ে কাদরিয়ার অনুসারী দরবেশ আলতাফ শাহ, ২০১৪ সালে মাজারের ভূমিদাতা শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহ এবং ২০১৬ সালে ভূমিদাতা খাজা সফুরা পাগলী মারা গেলে দরবার শরীফেই তাদের আলাদা কবর দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসের পূর্নিমার রাতে দরবার শরীফে জিকির, মিলাদ মাহফিল ও মুর্শিদী গানের আয়োজন শেষে তবারক বিতরণ করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর এখানে বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়। বড় বড় শিল্পীরা এখানে গান-বাজনা করতে আসেন। এখানে হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে। এতোদিন এসব কাজে কেউ বিরোধীতা করেনি। কিন্তু এখন মাজারগুলোতে হামলা চালিয়ে ক্ষতি করা হচ্ছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, মাজার শরিফে হামলা ও ভাংচুরের বিষয়টি শুনেছি। এঘটনার বিষয়ে মাজারের খাদেমকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া কথা বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বার্তাবাজার/এস এইচ