ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ। নিজ জন্মভূমিতে একখানা বাড়ি রয়েছে তার স্মৃতি চিহ্ন হয়ে। রউফনগরে অযত্নে আর অবহেলায় ধংস হতে চলেছে তার বসত ভিটা। চুরি হয়ে যাচ্ছে ঘরের দরজা জানালা। অন্যদিকে বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের একমাত্র রাস্তাটিও পাকা করা হয়নি স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও। ফলে শুধু গ্রামবাসীই নয় দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এ ব্যপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেবার দাবি জানিয়েছেন এলাকা বাসি। সরজমিনে গ্রামটি ঘুরে এলাকার নারী- পুরুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের এসব দুর্ভোগ ও দাবি দাওয়ার কথা। মধুমতি তীরের সালামতপুর গ্রামটি এখন রউফনগর হিসাবে পরিচিত। এ গ্রামের সূর্য সন্তান মুন্সি আব্দুর রউফ।একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রু বাহিনী সাথে সম্মুখ সমরে বীরত্বের সাথে লড়াই করে জীবন দিয়ে গেছেন। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে ভূষিত করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে। দেশ বাসির কাছে মুন্সি আব্দুর রউফ একটি গর্ব ও ভালবাসার নাম।প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারের সাথে উঠে আসে তাদের আত্মত্যাগের অবদান। এ গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠের নামে রয়েছে একটি যাদুঘর। এছারা বছরের বিভিন্ন সময় দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটা ও যাদুঘর দেখতে। সরকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের নামে তৈরি করেছে একটি স্মৃতিজাদুঘর ও লাইব্রেরি। কিন্তু রউফনগরে চলাচলের রাস্তাটি উন্নতি হয়নি স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৩ বছর পরেও। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মনে রয়েছে চরম ক্ষোভ। কামারখালী বাজার থেকে মধুমতি নদীর তীরের নিকটে কিছুটা পিচঢালা পথ। এরপর ফুলবারিয়া থেকে শুরু হয়েছে ইট বিছানো হেরিং বোন রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে রউফনগর ছাড়াও গন্ধখালী, দয়ারামপুর, কোমরপুর, বকশিপুর,মাধবপুর, চরপুকুরিয়া ও মাগুরা জেলার মহম্মদপুর সহ আসেপাশের কয়েকগ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে।

গন্ধখালি গ্রামের মোঃ নাসির বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাস্তা এমন দেখতেছি। শুনি যে পাকা হবে এ পর্যন্তই। একই গ্রামের মোঃ বিপ্লব বলেন প্রতিদিন এদিক দিয়ে কাজে যাতায়াত করি। রাস্তায় চলাচলে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হবার কায়দা। আপনাদের মত সাংবাদিকদের লেখনিতে যদি উপর মহলের চোখ পরে। এলাকার মানুষ যাতায়াতে ভিষণ কষ্টে আছে। এদিকে রউফনগরে চলাচলের রাস্তা থেকেও জরাজীর্ণ অবস্থা বীরশ্রেষ্ঠের বসতভিটার। অনেক আগে একতলা একটি পাকা ভবন তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। দরজা-জানালা চুরি হয়ে গেছে।সালামতপুর গ্রামের মোঃ পারভেজ নামের এক ছাত্র বলেন, বীরশ্রেষ্ঠের বাড়িতে থাকার মত কোন পরিবেশ নাই। জানালা -দরজা সব চুরি হয়ে গেছে। টিউবয়েলের মাথা পর্যন্ত নেই। এভাবে থাকলে কিছুদিন পরে বাড়ির ধংসবিশেষ ও পাওয়া যাবে না। বীরশ্রেষ্ঠের নামে রয়েছে একটি জাদুঘর ও লাইব্রেরি যা সপ্তাহে ৫ দিন খোলা থাকে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের বড়বোন জোহরা বেগম আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এটা যে একটা বীরশ্রেষ্ঠের বাড়ি দেখে তা কেও কবে না। কত মানুষ আসে তারাও আফসোস করে। বাড়ির সব কিছু এখন অকেজো। বীরশ্রেষ্ঠের নামে একটি প্রাইমারি স্কুলের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে কাগজ কোথায় আছে কিছুই জানিনা।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, মধুমতি নদীর ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা না থাকায় ধসে যাওয়ার আসঙ্খায় রউফনগরের সড়কটির উন্নয়ন করা যায়নি, এ বছর মধুমতি নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি নদী তীর সংরক্ষণের পর রাস্তাটির উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

বার্তাবাজার/এমআই