জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চিঠি (ডিও লেটার) পাঠিয়েছেন ইসি সচিব। ওই আইনে এনআইডি শাখাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার বিধান দেয়া আছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইসি সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত ডিও লেটারটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লব ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। ফলস্বরূপ গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নবযাত্রা শুরু করেছে। আপনি অবগত আছেন যে, ২০০৭-০৮ সালে দল-মত নির্বিশেষে সবার আস্থার জায়গা থেকে ইসির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনডিপিসহ নয়টি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ণের উদ্যোগ নেয়া হয়। আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় আট কোটি ১০ লাখ নাগরিকের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয়ভাবে ‘ভোটার তথ্যভাণ্ডার’ গড়ে তোলা হয়। সর্বশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে এই ডাটাবেজে প্রায় ১২ কোটি ১৯ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে।
ইউএনডিপির সমীক্ষা অনুসারে ভোটারদের এই সংগৃহীত ডাটা ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ সঠিক বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ব্যতিরেকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ অনুসারে ইসির একই জনবল দিয়ে বিগত ১৭ বছর যাবৎ নিবন্ধিত নাগরিককে এনআইডি সেবা দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশব্যাপী ইসির নিজস্ব অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তৎকালীন সরকার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্যসমৃদ্ধ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া রুলস অব বিজনেস ভেঙে সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে বিগত সরকার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগের মতামত গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়েই ইসির মতামত গ্রহণ করা হয়নি।
জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম স্থানান্তরে দ্বিমত জানিয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে বিগত কমিশন তার অবস্থান সুস্পষ্ট করে। কিন্তু সেই মত উপেক্ষা করে গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ বাতিল করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে উক্ত আইনটির কার্যকারিতার তারিখ নির্ধারিত না হওয়ায়, ইসির অধীনেই এখনও এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বার্তাবাজার/এসএম