অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, হাসিনা সরকারের প্রতি জনগণের ম্যান্ডেন্ট ছিল না। যে কারণে ওরা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সামনে মাথা নিচু করে থাকত। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে কথা হবে চোখে চোখ রেখে, মাথা নিচু করে নয়। কথা হবে মাথা উঁচু করে। ভারত এতদিন একটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু এখন আর তা হবে না। এ দেশের জনগণ পররাষ্ট্রের নীতির ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটি রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করবে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুনঃ-
- আমরা একটি রাজনীতি-সচেতন প্রজন্ম চাই : সমন্বয়ক হাসনাত
- সমন্বয়কদের কোন্দলে নরসিংদীতে সভা না করেই ফিরলেন সারজিস
আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্য দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, ক্ষমতায় গিয়ে ঠিক মতো রাষ্ট্র চালাতে না পারলে ওদের মতো পরিণতি হবে। বাংলাদেশের মানুষ বেশি কিছু চায় না। মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মতপ্রকাশ করতে চায়, বিলাসিতা নয়। যে মৌলিক অধিকার রয়েছে, সেগুলো নিশ্চিত হয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে চায়। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনের যাত্রার ফলে আমরা এমনভাবে পিষ্ট হয়েছি, ফেসবুকে একটি পোস্ট দিতে গেলেও ১০ বার ভাবা লাগত। গান গেয়ে, কবিতা লিখে অনেককে জেল খাটতে হয়েছে। আজ আমরা অন্তত এতটুকু স্বস্তিতে আছি। এখন আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি।
তিনি বলেন, শুধু ১৬ বছর নয়, গত ৫৩ বছর ধরে এ দেশের ওপর শুধু জঞ্জাল জমা হয়েছে। আমরা খুব দ্রুত সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ৫৩ বছরের জঞ্জাল একদিনে বা এক মাসে কীভাবে সমাধান করা যায় তা আমাদের জানানেই। কিন্তু এরইমধ্যে আমরা কিছু পরিবর্তন দেখতে পেরেছি। আপনারা গত ৫৩ বছরে এমন কোনো বন্যা দেখাতে পারবেন না যেখানে ত্রাণ চুরির ঘটনা ঘটেনি। এবার কিন্তু এরকম একটি ঘটনাও ঘটেনি। চাল, ত্রাণ চুরি করে, খাটে লুকিয়ে রাখার ঘটনা একটিও ঘটেনি। এয়ারপোর্টে আমাদের যে প্রবাসী ভাইয়েরা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, তাদের কীভাবে লাঞ্ছিত করা হত, তাদের লাগেজে আটকে রেখে তাদেরকে কীভাবে কষ্ট দেওয়া হত। এখন কী সেটা আছে? এখন আর সেটা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদদের তালিকা করা হবে। আপনারা জানেন অনেককেই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর অনেক প্রমাণ লোপাট করা হয়েছিল, তা আমাদের খুঁজে পেতে একটু সময় লাগছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যতজন শহীদ হয়েছে সবার তালিকা করা।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন বিআরটিএসহ অনেক সরকারি অফিসে জনগণকে ঘুরাতো, কষ্ট দিত, মানুষের কাছথেকে ঘুষ আদায় করত। এখন আর কেউ কি সেই সাহস দেখাচ্ছে? সেটি যেন আর কেউ ভবিষ্যতে সাহস না দেখায় আমরা সেই সংস্কারের কথা বলছি। সেই কাঠামোগত সংস্কার কীভাবে হবে সেটি আমরা ২১ জন যারা সরকারে বসেছি আমরা ঠিক করব না, সেটি নির্ধারণ করবেন আপনারা। সেটি নির্ধারণ করবে এ দেশের জনগণ।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, সুমাইয়া আক্তার, হামযা মাহবুব, জিয়া উদ্দিন আয়ান, আলী আহমেদ আরাফ, আবু রায়হান, তাছনিয়া নাওরিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বার্তাবাজার/এসএম