দেশে ব্যপী ভয়ংকর ইয়াবা বিস্তারের পেছনে দেশের শীর্ষ দশ পরিবারের মধ্যে টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদের অবস্থা দ্বিতীয়। মাদকের তালিকায় শীর্ষে থাকা সাইফুল করিমের মৃত্যুর পর সীমান্তে জাফরের নেতৃত্বে ইয়াবার সম্রাজ্যে দ্বিতীয় অধিপতি হিসেবে উঠে তার ছেলে ইলিয়াছ ও দিদার। সাবেক এমপি বদির হাত ধরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে বদির পর পরই এই এলাকায় নিজের অবস্থান গড়ে তুলেন বদিন এই সেনাপতি।

বদি টেকনাফ সীমান্তের মাফিয়া জগতের রাজা হলে ওই জগতের সেনাপতি টেকনাফের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ। গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বদি বদান্যতায় দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাত্র দুই মাস পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট স্বপদ থেকে অপসারিত হন তিনি।

সরকার পতনের অন্দোলনে ৫ আগষ্ট জাফরের নেতৃত্বে
ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায় জাফরের তিন সন্তান দিদার, শাহজাহান, ইলিয়াছ। হামলায় দুই সন্তানের হাতে পৃথক দুটি সার্টারগান ও দিদারের হাতে পিস্তল দেখেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ‘বার্তা বাজার’র হাতে এসেছে। সেখানে সার্টারগান হাতে তার কনিষ্ট ছেলে সালাহ উদ্দীনের নতুন একটি ছবি যোগ হয়েছে।

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ মানুষের উপর গুলি চালিয়ে সর্বশেষ ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত টেকনাফ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জাফর’কে প্রধান অতিথির আসনে দেখা যায়।

ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় ১৮ আগস্ট দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামী তিনি। ওই মামলা থেকে বাদ যায়নি তার ছেলেদের নাম।

এই মামলায় বদি চট্টগ্রাম হতে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে বন্দি। জাফরের ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াকে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। কিন্তু জাফর ও তার দুই ছেলে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে নির্ভর যোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে তারা ঢাকাতেই অবস্থান করছে।

বদির সেনাপতি জাফরের উত্থান যেভাবে:
মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা টেকনাফ সদর ইউপির লেঙ্গুরবিল গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আহমেদের ছেলে জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে উঠেন লোক শ্রমিকনেতা নামধারী দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ।

চাঁদাবাজির অর্থে টেকনাফ সদরের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হোয়ার পর আর পেছনে ফিতে থাকাতে হয়নি। আরাকান সড়ক হয়ে টেকনাফ স্থল বন্দরমুখী সব বাণিজ্যিক ট্রাক’কে কেন্দ্র করে রমরমা চাঁদাবাজি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা জাফর অবৈধ টাকার ও চিহ্নিত কয়েকজন ডাকাতদের ক্ষমতার জোরে কাড়ি কাড়ি অর্থের মালিক বনে যান।

 

 আরও পড়ুনঃ–

 

পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ভোটার দের ভয়ভিতির মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কালের পরিক্রমায় নানা রুপে আবির্ভূত হয়ে শুধুই বেড়েছে জাফরের অপরাধ এবং সম্পদের পরিমান।

ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকাকালীন বদির সাথে গড়ে ওঠে সখ্যতা। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শুরু হয় জাফরের নতুন অধ্যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়ে দলটির সমর্থন ও বদির ছত্রছায়ায় চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান হন জাফর।

পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হলেও জাফর কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য হয়ে ক্ষমতাসীন পদ ধরে রাখেন।

প্রথম মেয়াদে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জনের দ্বায়ে ২০১৯ জাফর ও তার স্ত্রী খাদিজার নামে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতির বিষয়টি জানা নাগেলেও চলতি বছর মে মাসে জাফরের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে দুদক।