ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এই দুর্নীতি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ, রোবট অলিম্পিয়াড ও শেখ রাসেল দিবসের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হতো।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশ দিবসের জন্য বাজেট নির্ধারণ করা হতো ২৩ থেকে ২৫ কোটি টাকা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পলক গত সাড়ে ১৫ বছরে দিবস পালনের জন্য প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা বাজেট করেছিলেন। এই দিবস পালনের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ টাকা খরচ হলেও, সরকারি কোষাগার থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত তুলে নেওয়া হতো।

পলক ও তার সহযোগীরা দিবস পালনের নামে কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শেখ রাসেল দিবসের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত টাকা ভাউচার দিয়ে তুলে নেওয়া হতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পদক বাণিজ্যও চলত, যেখানে দেশের নামিদামি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হাতানো হতো। পদক তৈরিতে প্রয়োজনীয় খরচের তুলনায় অনেক বেশি টাকা প্রদর্শন করা হতো।

পলক ও তার সহযোগীরা অনিয়ম ও দুর্নীতি লুকানোর জন্য নিজস্ব গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যবহার করতেন। প্রযুক্তি বিভাগের বার্ষিক ক্রয় প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোজাম্মেল হক বাবুর মিডিয়া হাউসগুলোতে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস বাস্তবায়ন না করেও পলক সিন্ডিকেট এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পলক সিন্ডিকেট ভুয়া সেমিনার ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। দিবস পালনের জন্য উপকরণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) মানা হয়নি। অডিট রিপোর্টে ধরা পড়া অনিয়মের মুখে কখনো টাকা দিয়ে আবার কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

অন্য সহযোগীদের মধ্যে ছিলো সহকারী প্রোগ্রামার এস এম এম ইশতিয়াক আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, সাবেক মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামাল, এবং উপপরিচালক (অর্থ) মো. ফিরোজ সরকার। তাদের সকলেই পলকের দুর্নীতির অংশীদার ছিলেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন এবং অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমানকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বার্তাবাজার/এমআই