অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়াতে নানামুখী চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তারপরও রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।

গত রোববার জুলাই-আগস্ট সময়ে আকুর বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। আর একই সময়ে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে আকুর বিল পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্রমান্বয়ে কমছে দেশের রিজার্ভ। এক সপ্তাহ আগে গত ২৮ আগস্ট বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এদিকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ নেমে গেছে ১৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে। আর একই সময়ে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। আর এক বছর আগে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৯ দমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

জানা গেছে, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বাজেট সহায়তার ঋণ হিসেবে আসা কোরিয়া সরকার, বিশ্বব্যাংক ও আইডিবি থেকে মোট ৯০ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হওয়ায় গত জুনের শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। ‘গ্রস’ হিসাবে ওঠে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। ৯ জুলাই আকু মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে নামে ২৫ দশমিক বিলিয়ন ডলারের নিচে। এরপর আরও কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ আরও কিছুটা বেড়েছিল। তবে গত রোববার আকুল বিল পরিশোধের পর তা আবার কমে যায়।

ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সরকার এবং গভর্নর রিজার্ভ বাড়াতে আইএমএফের কাছে আরও বাজেট সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থার কাছ থেকেও ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। এসব ঋণ যুক্ত হলে রিজার্ভ আবার বাড়বে।

জানা গেছে, আকুর দেনা পরিশোধের পর ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে রিজার্ভ টানটান অবস্থায় থাকবে। আকু হলো- কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

 

বার্তাবাজার/এসএম