আওয়ামী লীগ দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল, তাদের শোষণ ও নির্যাতনের জন্যই পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, আগামীতে ভালো নির্বাচনের পর ভালো সরকার দেখতে চাই।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দলের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হয়নি উল্লেখ করে সাবেক এই বিরোধীদলের নেতা বলেন, সরকারের পতন হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অন্দোলনের মুখে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষের ধারণা ছিল, ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে চায় না। কেউই বুঝতে পারেনি, ছাত্ররা এতটাই রাজনীতি সচেতন। ছাত্ররা প্রমাণ করেছে, আমাদের চেয়ে বেশি রাজনীতি বোঝে। তাদের প্রধান শক্তি হচ্ছে একতা আর দ্বিতীয় শক্তি হচ্ছে জনগণের আস্থা। সেজন্যই ছাত্রদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে এবং ক্ষমতা ও লোভ লালসার বাইরে থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে নষ্ট করতে চেয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, একইসঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতেও বাঁধা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনই নির্বাচন চাই না। ভালো নির্বাচন অতীতে অনেক দেখেছি। ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার হয় না। ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার দেখতে চাই। যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। যারা ব্যক্তিগত ও দলীয় সম্পদ হিসেবে দেশকে ব্যবহার করবে না।
সেই রকম সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, সেজন্য বর্তমান সরকারকে আমরা সময় দিতেও রাজি আছি। ভালো নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার বেশির ভাগ সময়ে স্বৈরশাসক হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারগুলো অনেক বেশি গণতন্ত্রমনা ছিল। তাই, অনির্বাচিত সরকারকে সংস্কারের জন্য সময় দিতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা চাই বর্তমান সরকার যেনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, কর্মসংস্থান যেন থাকে, তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, কিন্তু তাদের একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে।
আগামী নির্বাচনে তাদের একটা ভূমিকা থাকবে। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় না এসেই তাদের নেতাকর্মীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা সাধারণ মানুষ পছন্দ করছে না। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির মুখোমুখি অবস্থা। কেউ দখলবাজি শুরু করলে, ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করছে। শেষ পর্যন্ত জনগণ কার পক্ষে থাকবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
২০০৯ সালে ব্যাপক জনপ্রীয়তা নিয়ে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিছিল মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, দুর্নীতি ও দুঃশাসনে মানুষকে অস্থির করেছিল। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন ব্যবস্থা নিজেদের মতো করেছে।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ব্ল্যাকমেইল করে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়েছিল এমন অভিযোগ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তখন আমরা নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে কিন্তু বিএনপি অংশ নিয়েছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তারপরও আমরা নির্বাচনে যেতে চাইনি, তখন জোর করে আমাদের নির্বাচনে নেয়া হয়েছে। আমাদের অফিস ফেরাও করে রাখা হয়েছিল, আমরা যাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে না পারি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, শেরিফা কাদের, মাসরুর মওলা, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর ইসলাম খান, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, মইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, মো. মোস্তফা মহসিন, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ সেলিম, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হুমায়ুন খান, মো. আব্দুল হান্নান, এমএ রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, এম এ সুবহান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক প্রমুখ।
বার্তাবাজার/এসএম