ঢাকা ইপিজেড এর ভারতীয় মালিকানাধীন লেনী এপারেলস লিঃ ও লেনী ফ্যাশন লিঃ এর শ্রমিকগণ বকেয়া পাওনাদির দাবীতে ইপিজেড এর জোন অফিসের সামনে মানববন্ধন করেছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে আনুমানিক দুইশত থেকে আড়াইশত শ্রমিক জোন অফিসের সামনে তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে মানববন্ধন করে। এসময় ইপিজেড এর মেইন গেটের বাইরে আরোও প্রায় এক দেড়শত শ্রমিক উপস্হিত ছিল। তবে বেপজা কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরী বিক্রি সাপেক্ষে আগামী ৩০ নভেম্বর তাদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে। মানববন্ধন শেষে তিন থেকে সাড়ে তিনশত শ্রমিক ইপিজেড এর মেইন গেটের ভিতরে ও বাইরে অবস্হান করছিল।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, শিল্প পুলিশ, বেপজার নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার সদস্যরা পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনে কাজ করেছে। প্রসঙ্গত, উল্লেখিত ফ্যাক্টরি দু’টি ব্যবসায়িক সমস্যার কারণে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ধ ঘোষিত হয়। সে সময় শ্রমিকদের পাওনাদির ৪০% পরিশোধ করা হয় এবং বাকি ৬০% টাকা ফ্যাক্টরি দু’টি নিলামে বিক্রি সাপেক্ষে পরিশোধ করা হবে বলে শ্রমিকদের জানানো হয়। ইতোমধ্যে লেনী এপারেলস বিক্রি করা গেলেও লেনী ফ্যাশন ফ্যাক্টরীটি তিনবার নিলাম আহ্বান করা সত্ত্বেও বিক্রী করা সম্ভব হয়নি। ফ্যাক্টরীটি ৪র্থ বার নিলাম আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আশুলিয়ার জামগড়া শিমুল তলা এলাকায় ইউকোরিয়া ফ্যাক্টরিতে সৃষ্ট স্টাফদের সঙ্গে ওয়াকার্দের ঝামেলায় মারামারি শুরু হলে পরে পুলিশ গিয়ে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস মেরে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওই সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন। এসময় কারখানাটিতে ব্যাপক ভাঙচুর, র্যাবের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি।
এব্যাপারে, র্যাব-৪ (সিপিসি-২) জানায়, বিক্ষোভরত শ্রমিকদের শান্ত করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। র্যাব-৪ (সিপিসি-২) সাভার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান গণমাধ্যমকে জানান, আমরা এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বিকেলের দিকে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। তখন গার্মেন্টস থেকে তাদের ডিসপাস করার চেষ্টা করি৷ পরবর্তীতে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, এসময় বিক্ষুব্ধরা র্যাবের একটি গাড়িতে ভাঙচুর এবং আগুন দেয়। আমরা আগুন নেভাতে সক্ষম হই। সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল ছোড়ে। এসময় আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।মেজর জালিস মাহমুদ খান জানান, পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তে আমাদের ছায়াতদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর পেছনে মদদদাতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
তবে শ্রমিকদের বক্তব্য হলো, গতকাল (রোববার) মালিকপক্ষ আমাদের আংশিক বেতন পরিশোধ করলে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পরও মালিকপক্ষ আমাদের দাবি না মানায় সবাই ভেতরে অবস্থান নেয়। এসময়, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা এসে এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে আমাদের অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
বার্তাবাজার/এস এইচ