বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বহু বছর ধরেই কথা হচ্ছে। ২০২৩ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থা ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬৩। সাংবাদিকদের হয়রানি-নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতি গত ৫ আগস্ট দেশে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হয়। তারপর থেকে নানা মহলে পরিবর্তনের পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও পরিবর্তনের কথা ওঠে।

নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের এক মাস উপলক্ষে বাংলাদেশ মিডিয়া মনিটর সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতার ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। কতটা স্বাধীনভাবে তারা কাজ করতে পারছে বা আগের মতই পরিস্থিতি আছে কি না এটা জানতে চাওয়া হয়েছিল ৭৮ জন সংবাদকর্মীর কাছে।

এই ৭৮ জন সংবাদকর্মীর মধ্যে ২৪ জন ছিলেন টেলিভিশন সাংবাদিক, ১৫ জন নিউজ পোর্টাল, ২১ জন সংবাদপত্রের, ২ জন্য ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ১ জন বার্তা সংস্থার। অংশগ্রহণ করাদের ৬২.৮ শতাংশ ছিল প্রতিবেদক। এ ছাড়া ২০.৫ শতাংশ ছিল বার্তাকক্ষে কাজ করা সংবাদকর্মী। ফটো/ভিডিও সাংবাদিক ছিলেন ৪১.১ শতাংশ। কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ছিল ২.৬ শতাংশ।

অংশগ্রহণাকারীদের কাছে প্রশ্ন ছিল ৫ আগস্টের পর দেশের সাংবাদিকতায় পরিবর্তন এসেছে বলে আপনি মনে করেন কিনা? পরিবর্তন হওয়ার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে ৫১.৩ শতাংশ সাংবাদিক আর কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করেন এখনও ৪৮.৭ শতাংশ সাংবাদিক। পরিবর্তনের জায়গাগুলো নিয়ে ২/১ জন সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, তারা কোন বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে না। নিজেদের মতো কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এর বিপরীতে থাকা ২/১ জন সাংবাদিক দাবি করেছেন, তারা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ছবি/ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে বেশি বাঁধা রয়েছে।

আরেকটি প্রশ্ন ছিল কাজের স্বাধীনতা কেমন? সেখানে ৫৮.৪ শতাংশ জানিয়েছেন আগের চেয়ে কাজের স্বাধীনতা ভালো। তবে ৩১.২ শতাংশ সাংবাদিক বলছেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা আগের মতই। ৭.৮ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, কাজের পরিস্থতি আগের চেয়ে খারাপ। এছাড়া ১.৩ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়েও খারাপ। কিছুটা লেখার স্বাধীনতা মিলেছে বলেও মনে করেন আরও ১.৩ শতাংশ সাংবাদিক।

তবে হ্যা/না এ উত্তর দেওয়ার জন্য আরেকটি প্রশ্ন ছিল। যেখানে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছে কি না? যার পক্ষে মানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সুযোগ পাবার পক্ষে ছিলেন ৫৩.৯ শতাংশ আর বিপক্ষে ছিলেন ৪৬.১ শতাংশ।

তবে সব প্রশ্নগুলোর উত্তর পজেটিভের শতাংশ বেশি থাকলেও, নেগেটিভ ছিল সংবাদ সংগ্রহের বিষয়টিতে। প্রশ্ন ছিল সংবাদ সংগ্রহে এখনও আতংক কাজ করে কিনা? সেখানে ৫৫.১ শতাংশ সাংবাদিক জানিয়েছেন তারা সংবাদ সংগ্রহের সময় এখনও আতংকিত থাকেন। আর আতংক কাজ করে না এমন সাংবাদিকের সংখ্যা ৪৪.৯ শতাংশ।

তবে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে আতংকিত না ৫২.৬ শতাংশ সাংবাদিক। বিপরীতে সংবাদ প্রকাশের আগে ভাবতে হচ্ছে ৪৭.৪ শতাংশ সাংবাদিককে। যা থেকে সেলফ সেন্সরের বিষয়টি আবারও সামনে উঠে এসেছে।

সর্বশেষ প্রশ্ন ছিল সকল অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের কাছে, বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন কিন? অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বড় অংশই আশার আলো দেখছেন না। ৫৩.৯ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় কোন পরিবর্তন আসবে না। তবে ৪৬.১ শতাংশ এখনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।

এদিকে এই জরিপের পুরো বিষয় নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, কোন জবাব পাইনি।

বার্তাবাজার/এমআই