জাতীয় যুব কাউন্সিলের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ আলম ভুয়া প্রশিক্ষণের নামে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন।

স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পলায়নের পর, দেশজুড়ে নেতা-কর্মীরা লুকিয়ে থাকলেও, জাতীয় যুব কাউন্সিলের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ আলম এখনও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে তার দম্ভ প্রদর্শন করছেন।

জাতীয় যুব কাউন্সিলের নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক ও কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে কিছু অসাধু কর্মীর সহযোগিতায় তিনি সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন।

ছাত্র আন্দোলনের সময়, মাসুদ আলম এবং তার এক সহযোগীসহ রাজধানীর উত্তরায় মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের তল্লাশিকালে একটি প্রাডো গাড়ি থেকে টাকার বস্তা সহ আটক হয়। একটি ৫০ কেজির পাটের বস্তায় টাকা ভর্তি ছিল। মাসুদ আলম ও তার সহযোগীকে আটক করা হয় এবং তাদের টাকাসহ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। গাড়িটির নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫–১৫৮১ এবং তাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের স্টিকার ছিল।

যুব কাউন্সিল ছাড়াও, তিনি বিভিন্ন নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের সাথে নানা ভাবে যুক্ত আছেন। তার মধ্যে রয়েছে: ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিঃ, ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রমিজ আইটি সলিউশন লিঃ, ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগদ এক্সপ্রেস কুরিয়ার, ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগদহাট বাংলাদেশ লিঃ, ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ই-টেলিকম, ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রমিজ ইনফোটেক লিঃ, চেয়ারম্যান সোসাইটি ফর পিপলস অ্যাডভান্সমেন্ট, পরিচালক রিসদা বাংলাদেশ, স্বত্বাধিকারী মোরাল লার্নিং ইনস্টিটিউট, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক “আজকের দৈনিক” পত্রিকা, প্রতিষ্ঠাতা ক্লিক দ্য ফটো ও ফটো ফিক্সা।

এই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তিনি পলক গ্যাং-এর একজন সদস্য। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশি যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান’ প্রকল্পের আওতায় ১৬টি জেলায় ৯০ দিনব্যাপী (৬০০ ঘন্টা) প্রশিক্ষণের নামে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এই মাসুদ চক্র। সরজমিনে দেখা যায়, কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না দিয়েই মন্ত্রণালয় থেকে বিল তুলে নেন তার প্রতিষ্ঠান। নামে-বেনামে সরকারি প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেন তিনি।

প্রশ্নবিদ্ধ গত জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নামে “শেখ হাসিনাতেই আস্থা” নামক সোশ্যাল মিডিয়া পেজ (এমএসপিএম) সামরিক সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিচালনা করেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি “স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড,” “শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড,” “জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২৩,” “শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী” পদক অর্জন করেছেন। তার বাবা আজাহার উদ্দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নেতা এবং তার ছোট ভাইয়েরাও ছাত্রলীগের কর্মী।

এভাবেই যুব ক্ষমতায়নের নামে মাসুদ আলম অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ লুট করেছেন এবং সাধারণ থেকে মাফিয়া হয়ে উঠেছেন।