বিরাজ চন্দ্র সরকার, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ঢাকার উপ-পরিচালক, তার একক সিদ্ধান্তে পুরো যুব উন্নয়ন ঢাকা জেলা পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে, যা আরও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিরাজ চন্দ্র সরকার তার পছন্দের কিছু সংগঠনকে দীর্ঘদিন ধরে অনুদান দিয়ে আসছেন এবং প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া প্রশিক্ষণ আয়োজন করে সংগঠনগুলো থেকে অর্থ আদায় করছেন।

অভিযোগকারীদের মতে, তার অন্যতম সহযোগী খাঁন মোঃ মনোয়ার হোসেন, প্রশিক্ষক (ইলেকট্রনিক্স), এই দুর্নীতির কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

বিভিন্ন সংগঠন নিশ্চিত করেছে যে কোর্স প্রতি ২০০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা নেওয়া হয়, এবং এই সাত দিনের কোর্সের সার্টিফিকেট পেতে টাকা দেয়ার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়।

মতিঝিল থানা ইউনিটের কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগমকেও এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা জেলার অফিসিয়াল গ্রুপে কথা বলার জন্য সদস্যদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী বক্তব্য দেওয়ার জন্য অফিসিয়াল গ্রুপ থেকে বেশ কয়েকজন সংগঠককে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

আমাদের অনুসন্ধানকালে অনেক জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠক অভিযোগ করে বলেন: “আমাদের ঢাকা জেলার ডিডি বিরাজ চন্দ্র সরকার অনৈতিক কিছু সংগঠক এবং উদ্যোক্তা নামের কিছু অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে এক সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।”

এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যরা হলেন: ১) নেয়ামত উল্লাহ বাবু, সভাপতি, ভার্তি সংঘ (২০১০ আত্মকর্মী এবং ২০১৭ সংগঠনের পুরস্কার পেয়েছেন) ২) হাসিনা মুক্তা, সভাপতি, নতুনত্য (২০১৪ সালে আত্মকর্মী পুরস্কার পেয়েছেন) ৩) রোকসানা পারভীন দীপু, সভাপতি, প্রতিবেশী যুব সংস্থা (২০০৭ আত্মকর্মী এবং ২০১৭ যুব সংগঠক পুরস্কার) ৪) মাসুদ সরকার, সভাপতি, স্টার যুব কল্যাণ সংস্থা (২০১৮ সালে আত্মকর্মী হিসেবে ঢাকা জেলা পুরস্কার পেয়েছেন) ৫) সাজেদুল ইসলাম দুলাল (ভুয়া সংগঠক) ৬) প্রীতি ইসলাম পারভীন (ভুয়া সংগঠক)

দুলাল যখন সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন ২০১৯ সালে, তখন ভোটার আইডি অনুযায়ী তার বয়স হয় ৪২, কিন্তু যুবর নীতিমালা অনুযায়ী বয়স ১৮-৩৫ বছর হতে হবে। তাই যুব পুরস্কারের নীতিমালা অনুযায়ী তিনি পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারেন না। তবুও বিরাজ স্যার এবং ফেরদৌসী এই ফাইল জমা দিয়েছেন।

দুলাল এবং প্রীতি দু’জনই যুবতে ঢুকেছেন ৪২ বছর বয়স পার করে। যুব নীতিমালা অনুযায়ী তারা কেউই যুব উন্নয়নের কোনো প্রশিক্ষণ এবং নিবন্ধন নিতে পারবেন না। কিন্তু তারা বিভিন্ন ছলনা করে নানা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং স্যারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। তারপর ফাঁকফোকর দেখে কর্মকর্তাদের সাথে লিয়াজু করে যুব পুরস্কারের ফাইল সাবমিট করে।

২০২৩ সালে জাতীয় যুব পুরস্কারের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য জানান, “দুলাল আর প্রীতির অবৈধ ফাইলের জন্য রিপোর্ট করলে বিরাজ চন্দ্র সরকার আমাকে কল দিয়ে খারাপ ব্যবহার এবং হুমকি দেয়। এই ফাইল প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিরাজ চন্দ্র সরকার এবং ফেরদৌসী বেগম মিলে দুলালের ফাইল যুব পুরস্কারের জন্য সাবমিট করেছেন। উল্লেখ্য, দুলাল এবং প্রীতি কেউই যুব সংগঠক নন, তারা আত্মকর্মীও নন।”

এছাড়া, ইয়থ কাউন্সিলের সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদ আলম এর সাথে যুক্ত হয়ে ঢাকা জেলার বিভিন্ন অসাধু কার্যক্রম করে চলছে এই বিরাজ সিন্ডিকেট।

তথাকথিত সিনিয়র যুব সংগঠকদের সহায়তায় যেমন নেয়ামত বাবু, হাসিনা মুক্তা, রোকসানা দীপু, মাসুদ সরকার, প্রীতি ইসলাম পারভীন, এবং দুলাল সবাই মিলে সহযোগিতা করেছে মাসুদ আলমকে যুব কাউন্সিলের সভাপতি হতে। কার্ফিউ টাইমে আড়াই কোটি টাকা সহ ছাত্রদের হাতে ধরা পড়েছেন মাসুদ আলম।

এক সংগঠক জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি বিরাজ করছে। ৫ হাজার টাকার ৭ দিনের কোর্সের জন্য অনেক সংগঠনকে স্টুডেন্ট ও অফিস ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, তবে থানা পর্যায় থেকে মাত্র ২৫০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে; বাকি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বিরাজ এবং তার সহযোগীরা।

বৈষম্য বিরোধী যুব সংগঠন দ্রুত এই অসাধু কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং তাদের আর্থিক দুর্নীতি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে।