পটুয়াখালীতে হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার ৬ নং জৈনকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে। এ প্রকল্পে অতিদারিদ্র্য শ্রমজীবীদের নাম থাকার কথা থাকলেও রয়েছে চাকরিজীবী, স্বচ্ছ, মেম্বারের বউ, ভাতিজা এবং বহিরাগতদের নাম। এছাড়া মন গড়া শ্রমিকদের নাম উল্লেখ করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা বলে জানান শ্রমিকরা।
জানাগেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে হতদরিদ্রদের কর্মসূচির আওতায় ১ম পর্যায়ে ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অর্থ দিয়ে ৩ নং ওয়ার্ডের কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ বালু দিয়ে ভরাট করা, ৪ নং ওয়ার্ডের আজাহার হাওলাদারের বাড়ি থেকে ইউসুফ সিকদারের বাড়ি পর্যন্ত বালু ও মাটি দিয়ে রাস্তা মেরামত এবং ৭ নং ওয়ার্ডের জুম্মান আলী প্যাদার বাড়ি থেকে কমলার বাজারের ব্রীজ পর্যন্ত বালু ও মাটি দিয়ে রাস্তা মেরামত। ২য় পর্যায়ে ৬৯ জন লেবারের বিপরীতে ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা ১নং ওয়ার্ডের খালেক হাওলাদারের বাড়ি থেকে মদন নাসিরের বাড়ি পর্যন্ত ৮০০ ফুট রাস্তা মেরামত, ৮ নং ওয়ার্ডের কমলার বাজার থেকে ইয়াছিন মুন্সির বাড়ির মসজিদ রাস্তা মেরামত এবং ৯ নং ওয়ার্ডের সেহাকাঠী মৌবাড়িয়া সূলীজের দক্ষিণ পাড়াদিয়া পশ্চিম দিকে রাস্তা মেরামতের কাজ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব কাজে মাটি ও বালি দিয়ে ভরাটের কথা থাকলেও বেশি ভাগ কাজই বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। হতদরিদ্রের এই কাজে ৬৯ জন লেবারের বিপরীতে কাজ করানো হয় ১৫/১৭ জন লেবার দিয়ে এবং প্রতিদিন কাজ শেষে দেয়া হতো ৫০০ টাকা করে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক লেবার জানান, তাদের দিয়ে সপ্তাহ খানেক কাজ করানো হয় এবং প্রতিদিন কাজ শেষে ৫০০ টাকা করে মজুরি দিতো মেম্বার। কাজ চলার সময় বাবুল মেম্বার প্রত্যেক শ্রমিকদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, ছবি এবং সিম কেনার কথা বলেন এবং কাজ শেষে প্রত্যেক শ্রমিক ঢাকা পাবে বলেন। কিন্তুুু সপ্তাহ খানেক কাজ করানোর পর আর তাদের দিয়ে কাজ করানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা এবং তাদের আর কোন টাকা পয়সাও দেয়া হয়নি বলে জানান। পরে তাদের ভোটার আইডি কার্ড, ছবি এবং সিম ফেরত চাইলে তাও দেয়া হয়নি।
এবিষয়ে ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবুল মৃধা জানান, প্রকল্পের কাজ ঠিক মতই করানো হয়েছে। শ্রমিকদের তালিকায় আপনার বউ, ভাই এবং ভাইয়ের ছেলের নাম এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এবিষয়ে আমি কিছু জানিনা। এছাড়াও শ্রমিকদের টাকা দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড, ছবি এবং সিম কেনা হয়েছে সেগুলো কোথায় গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে মেম্বার বাবুল মৃধা বলেন, চেয়ারম্যান লেবার সর্দার কালামের মাধ্যমে ঐসব কাগজ পত্র নেন। এছাড়া আমি কিছু জানিনা। তিনি আরো বলেন, জনগণ বলেছিলো মাটি দিয়ে রাস্তা ভরাট করলে কাঁদা হবে তাই তাদের সুবিধার জন্য বালু দিয়ে রাস্তা ভরাট করা হয়।
৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্রকল্প সভাপতি রুবেলকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
৬ নং জৈনকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন জানান, ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কোন অনিয়ম হয়নি। শ্রমিকদের ভোটার আইডি কার্ড, ছবি এবং সিম নাকি আপনার কাছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন শ্রমিকদের সাথে ফোনে আমার কোন রকম কথা হয়নি। আর তাদের কাগজ পত্র আমার কাছে না। এছাড়া শ্রমিকের নামের তালিকায় মেম্বারের বউয়ের নাম, ভাইয়ের নামের বিষয়ে তিনি বলেন, এই নাম গুলো আমার আগের চেয়ারম্যানের দেয়া ছিলো।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমে তিনটি প্রকল্পে কাজ হওয়ার কথা থাকলেও একটি প্রকল্পের কাজ বাদ হয়। পরে দুইটি প্রকল্পে ৪৬ লেবারে ৬ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার কাজ হয়। এছাড়া রাস্তার কাজ ঠিক মতই হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
এছাড়া গত ১১ জুলাই ঐ ইউনিয়নের ৪০ দিনের কাজে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক মোঃ শরিফুল ইসলামের বরাবর অভিযোগ দেন জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এ্যাড. মোঃ সহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি।
বার্তা বাজার/জে আই